ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অকাল বৃষ্টিতে আতঙ্কে কৃষক, ব্যাপক ফসলহানির শঙ্কা 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
অকাল বৃষ্টিতে আতঙ্কে কৃষক, ব্যাপক ফসলহানির শঙ্কা  বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসল দেখছেন এক কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ (ফাইল ফটো)

ঢাকা: অগ্রহায়ণ শেষের অকাল বৃষ্টিতে দেশের কৃষিতে বেজে উঠেছে অশনি সংকেত। অনেক স্থানেই মাটিতে পড়ে গেছে মাসকলাই। পচতে শুরু করেছে করল্লা। লাল শাক আর ডাঁটা শাকসহ শীতের অনেক সবজিই পানি বন্দি হয়ে পচনের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কৃষকের মনে। 

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গম, সরিষা ও মসুর ডালের সময়োচিত বপন পর্ব। মরিচ, পিঁয়াজ আর রসুনের লাভও সুদূর পরাহত হয়ে পড়েছে অনেক স্থানে।

 

বিশেষ করে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না থাকায় নিচু জমি ও হাজারো চরে এখন সব হারানোর আতঙ্ক। শুকনো মাটিতে চাষের উপযোগী সব ফসলের ক্ষেতেই বৃষ্টি ভেজা অনিশ্চয়তা।  

চলতি বছরের অতিরিক্ত বৃষ্টি ও দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ওপর শীত মৌসুমের এই অকাল বৃষ্টি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়েই দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফলন পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি জেগেছে অনেক দিন ধরেই গরম হয়ে থাকা সবজি বাজারে আরো দাম চড়ার ভয়।  

কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মানিকগঞ্জ) আলিমুজ্জামান মিয়া’র সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট খন্দকার সুজন হোসেন জানান, আরো বৃষ্টি হলে পেঁয়াজ, রসুনের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে ডাঁটা শাক, লাউ শাক আর করল্লা’র ক্ষেতে এরই মধ্যে বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নিচু এলাকার জমিতে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশী।  আর এক দিন বৃষ্টি হলেই এসব সবজি আর ফসল সব শেষ হয়ে যাবে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক আব্দুল আউয়াল এবার করল্লা চাষ করেছিলেন ১ বিঘা জমিতে। ফলন ভালোই হয়েছে। করল্লা তোলাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু পানি জমে যাওয়ায় আর তুলতে পারছেন না। আর এক দিনের মধ্যে জমে যাওয়া পানি জমি থেকে বের করতে না পারলে সবটাতেই পচন ধরবে।  

সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক বাবুল হোসেন ২ বিঘা জমিতে লাল শাক আর লাউ শাক চাষ করে অকাল বৃষ্টিতে পড়েছেন চরম বিপাকে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন,  আর দুদিন বৃষ্টি হলে সব শেষ হয়ে যাবে। কাল-পরশুর মধ্যে তুলতে না পারলে এক মুঠো শাকও আর তোলা যাবে না।  

বগুড়া থেকে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বেলাল হোসেন জানান, শেরপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ও উচুলবাড়িয়া গ্রামের মরিচ চাষি ইউসুফ আলী, সেলিম রেজা ও মিজানুর রহমান মরিচ চাষ করে বৃষ্টিতে আতঙ্কে ভুগছেন। এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সব মরিচ নষ্ট হয়ে যাবে।  

সারিয়াকান্দি উপজেলার কুড়িপাড়া চর, চান্দিনা চর ও মাইজবাড়ি চরের কৃষক জালাল মোল্লা, আনিসুর রহমান ও আব্দুস ছাত্তার জানান, এবার মাসকলাই চাষ করেছেন তারা।
 
আর দিন পনেরো পর ওই কালাই তোলা হতো। কিন্তু অকাল বৃষ্টিতে কলাই পড়ে গেছে মাটিতে। এর ফলে ফলন কমবে। রঙ হবে মাটি মাটি।

ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা ও বোয়ালমারিসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর পেঁয়াজের চাষ হয়। সদরপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় হয় সরিষাসহ শীতকালীন সবজি।  

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রেজাউল করিম বিপুল বলেন, গত দু’দিনের বৃষ্টিতে ফরিদপুরে সবচে’ বেশী ক্ষতি হয়েছে গম, সরিষা ও মসুর ডালের ক্ষেতে। এগুলোর এখন বপন পর্ব চলছিলো। এসব ফসল বপন করতে হয় দ্রুত। কিন্তু বৃষ্টিতে সময় ক্ষেপন হয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কম হবে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে পেঁয়াজের। বৃষ্টি চলতে থাকলে মাঠের পাকা ধানও আর তোলা যাবে না। অপূরণীয় ক্ষতি হবে।  

সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কৃষক ইব্রাহিম মোল্লা বলেন, ২ বিঘা জমিতে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আরো বৃষ্টি হলে সব যাবে।  

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা বলে ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট সুমন রায় জানান, এ দুদিনের বৃষ্টিতে এ জেলায় সবজির খুব বেশী ক্ষতি এখনো হয়নি। তবে ভারী বর্ষণ হলে ক্ষতি হবে ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, মূলা ও কচু ক্ষেতে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
জেডএম/ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।