ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তোমাদের কষ্ট দেখলে প্রশান্তি বিঘ্নিত হয়,রোহিঙ্গাদের পোপ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৭
তোমাদের কষ্ট দেখলে প্রশান্তি বিঘ্নিত হয়,রোহিঙ্গাদের পোপ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলছেন পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘তোমাদের কষ্ট দেখে আমাদের প্রশান্তি বিঘ্নিত হয়। আমরা সবাই শান্তি চাই। যেখানে মন্দ রয়েছে, সেখানেই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি আমরা।’ 

শুক্রবার (০১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আর্চ বিশপ মাঠে এক সভায় তিনি এ কথা বলেন। এর আগে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তিনটি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন পোপ ফ্রান্সিস।

 

পরিবার তিনটিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।  

আরও পড়ুন>>
** 
রিকশায় চড়লেন পোপ ফ্রান্সিস 

বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার না করলেও পোপ ফ্রান্সিস বলেন, বাংলাদেশের অনেকে বলেছেন তোমাদের (রোহিঙ্গা) দুঃখের কথা। এখন সাহায্য করা দরকার। আমরা তোমাদের অধিকার রক্ষায় অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবো। ’

এর আগে বাংলাদেশ ও ভ্যাটিকানের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে সভাস্থলে পৌঁছালে ইসলাম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের পক্ষ থেকে পোপকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।  

শুভেচ্ছা জানান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, যোগেশ্বর নন্দ ও শ্রদ্ধানন্দ মহাথেরো। অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের পক্ষে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বক্তব্য দেন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পক্ষে বক্তব্য দেন থিওপিল নকরেক।  

রিকশায় চড়ে অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস।  ছবি: সংগৃহীতসবার বক্তব্যেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উঠে এসেছে। পরে বিশ্ব শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করেন পল শিশির সরকার।  

এরপরই বক্তব্য শুরু করেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, সকল ধর্মের পক্ষ থেকে আমাকে স্বাগত জানানো হয়েছে-এজন্য আমি কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদ জানাই। সকল ধর্ম বিশ্বাসীরা উপলব্দি করেছেন, একে অন্যকে সহযোগিতা করবেন। এটি খুবই ভালো বিষয়।  

‘আর এমন উন্মুক্ত হৃদয় একটি পথ, যা আমাদের প্রত্যেককে উপরে নিয়ে যায়। ’

বক্তব্যের শেষে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ক্ষমা চাই, তোমাদের কাছে আমরা ক্ষমা চাই।  

কথাটি স্পেনিশ ভাষায় বলেন পোপ। পরে বাংলানিউজকে এটি অনুবাদ করে জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও।  
 
এর আগে বিশেষভাবে সাজানো একটি রিকশায় চড়ে রাজধানীর কাকরাইলে আর্চ বিশপ হাউজের মাঠে আয়োজিত সভায় পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস।  

মিয়ানমার সফর শেষে নেপিদো থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সরাসরি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান পোপ। এ সময় সেখানে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।  

পরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান তিনি। সেখান থেকে যান রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে।  

পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এদিন অন্যান্য কূটনীতিকদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন তিনি।  

সফর সূচি অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খ্রিস্টধর্মীয় উপাসনা ও যাজক অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পোপ। বিকেলে ভ্যাটিকান দূতাবাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  

সফরের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর (শনিবার) মাদার তেরেসা ভবন পরিদর্শন করবেন পোপ। পরিদর্শন করবেন বিভিন্ন মিশনারিও।  বৈঠকে বসবেন খ্রিস্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে। বিকেলে তিনি নটরডেম কলেজে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে।  

সফর শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় রোমের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়বেন পোপ ফ্রান্সিস।

গতবছর প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের ক্যাথলিক বিশপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানালে পোপ চলতি বছরের শেষ দিকে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট এই ধর্মগুরুর ঢাকা সফরের সূচি ঘোষণা হয়।

এর আগে ১৯৮৬ সালে পোপ জন পল এবং ১৯৭০ সালে পোপ ষষ্ঠ পল বাংলাদেশ সফর করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭/আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা
কেজেড/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।