ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রেমের টানে দেশান্তরী, কুমিল্লায় ফিরলো সুমির মরদেহ

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
প্রেমের টানে দেশান্তরী, কুমিল্লায় ফিরলো সুমির মরদেহ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ব্রাহ্মণপাড়া ও ভারতের কলমচুড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সুমির মরদেহ বিজিবি/ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা: মোবাইল ফোনে পরিচয়ের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কুমিল্লার সুমি আক্তার (২২)। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের এক পর্যায়ে পারিবারের ও স্বজনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে নাজমুল হাসান নামের ভারতের এক যুবককে। বিয়ের এক মাস শেষ হতে না হতেই সুমিকে মরদেহ হয়ে ফিরতে হলো কুমিল্লায়।

রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী শশীদল বিওপির বিজিবি ও ভারতের আশাবাড়ী বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ব্রাহ্মণপাড়া ও ভারতের কলমচুড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সুমির মরদেহ বিজিবির কাছে হস্থান্তর করে বিএসএফ।

নিহত সুমি আক্তার কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার সুজানগর এলাকার ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে।

এক মাস আগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কলমচুড়া থানা এলাকার রহিমপুর গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে নাজমুল হাসানের সঙ্গে বিয়ে হয় তার।

বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী আশাবাড়ীর এলাকার স্থানীয় লোকজন ও সুমির স্বজনরা জানান, বিয়ের এক সপ্তাহের মাথায় সুমিকে যৌতুকের জন্য মারধর ও চাপ প্রয়োগ করে নাজমুল হাসান। এক পর্যায়ে সুমি স্বামী সংসারে সুখের কথা ভেবে স্বজনদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নাজমুল হাসানকে দেয়। তারপরও নাজমুল আরো যৌতুকের জন্য সুমির উপর শারিরিক ও মানষিক অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে সুমি ধৈর্য্য হারিয়ে স্বামী সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার স্বামীকে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে সুমি স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় তার স্বামী ও তার মামা শ্বশুর আব্দুল জলিল বাংলাদেশের সীমানা থেকে সুমিকে ধরে ভারতের সীমানায় নিয়ে মারধর করে শ্বাসরোধ করে বস্তায় ঢুকিয়ে ভারতের কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমানায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টাকালে বিএসএফ সদস্যরা তা দেখে ফেলে। এসময় ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী নাজমুল ও মামা শ্বশুর আব্দুল জলিল পালিয়ে যায়।

পরে ঘটনাস্থল থেকে বিএসএফ সুমিকে উদ্ধার করে ভারতের বস্কনগর সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় সুমি। এ ঘটনায় ভারতের কলমচুড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। এবং ময়নাতদন্ত শেষে রোবার দুপুরে সুমির মরদেহ বাংলাদেশে হস্থান্তর করা হয়।

মরদেহ হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ৬০ ব্যাটালিয়ন বিজিবির নন কমিশনার অফিসার মেহেদী হাসান, শশীদল বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার নায়েব সুবেদার টিপু সুলতান, ব্রাহ্মণপাড়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সুনিলসহ বিজিবি ও থানা পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা।  
ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- আশাবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্প কমান্ডার এস কে মিতু ও কলমচুড়া থানা পুলিশ এবং বিএসএফ ও পুলিশের সদস্যরা।

এ বিষয়ে শশীদল বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার নায়েব সুবেদার টিপু সুলতান জানান, ভারতে সুমির ময়নাতদন্তে শেষে একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারত এবং ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বিএসএফ আমাদের কাছে মরদেহ হস্থান্তর করে। পরে আমরা সুমির স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৭
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।