হাজার হাজার মানুষকে রাতের অন্ধকারে টর্চ লাইটের আলোয় সাদা পোশাকে পর্যবেক্ষণ করছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কয়েকজন সদস্য। এই দলের নেতৃত্বে আছেন বিজিবি’র শাহপরী দ্বীপ ক্যাম্প এর সার্জেন্ট ইদ্রিস।
সার্জেন্ট ইদ্রিস বাংলানিউজকে বলছিলেন, ওকে (পালানো রোহিঙ্গা যুবক) দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। ওর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অবৈধ কিছু আছে কিনা! সে প্রথমে অস্বীকার করে। পরে যখন বললাম ব্যাগ থেকে ইয়াবা’র গন্ধ আসছে কেনো? ও তখনই আমাদের এক সদস্যকে ধাক্কা দিয়ে আচমকা নদীর দিকে দৌড় দেয়। আমাদের কাছে খবর ছিলো, এক যুবক ৩ থেকে ৫ লাখ ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ঘাটে আসছে। সম্ভবত পালানো যুবকই সেই ব্যক্তি। ওর কাছে যে পোটলা দেখা গেছে, তাতে অন্তত লাখ পাঁচেক ইয়াবা আছে। কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে ওকে খুজেঁ পাওয়া কঠিন। আবার সবার ব্যাগ, বস্তা পরীক্ষা করাও অসম্ভব। তার ওপর এতো সংখ্যক বিদেশি সাংবাদিক রয়েছেন যে, পোশাক পরে এদের ওপর নজরদারি ও ব্যাগ তল্লাশি করলে বাজে উদাহরণ তৈরি হতে পারে।
সার্জেন্ট ইদ্রিসের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তখনই তার দুই সহকর্মী দুই রোহিঙ্গা যুবককে ধরে নিয়ে এলেন দুই বস্তাসহ। বস্তা খুলে দেখা গেলো, সেগুলো অবৈধ সিগারেটের কার্টুনে বোঝাই। সবার সামনেই সেই বস্তা খুলে মাটিতে ঢালা হলো। তৈরি হলো আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেটের এক আশ্চর্য স্তুপ।
সিগারেট আনা দুই যুবকের একজনের নাম আবুল কাসিম। জানতে চাইলাম তিনি কি জানতেন এখানে সিগারেট আনা নিষিদ্ধ! জবাবে তিনি বললেন, এসব আমার দোকানের সিগারেট। আমার দোকানে ছিলো। যখন চলে আসতেই হলো, তখন নিয়ে এলাম। দোকানের অন্য সামগ্রী কোথায় এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টা। উখিয়ার পালংখালি ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন সাকির হোসেন ও তার পরিবার। তিনিও নিয়ে এসেছেন এক বস্তা সিগারেট। তার সঙ্গে থাকা আর এক যুবককে ধাওয়া করছেন বিজিবি সদস্যরা। দ্রুতই যুবকটি হারিয়ে যায় অন্ধকারে নোম্যান্সল্যান্ডে। বিজিবি সদস্যদের ধারণা, তার কাছে প্রচুর ইয়াবা রয়েছে।
টেকনাফ বিজিবি’র এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এরইমধ্যে কয়েক লাখ পিস ইয়াবা শরণার্থীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তারা মদ, সিগারেট, মাদক, স্বর্ণ ও দেশের ক্ষতি হয় এমন জিনিসও নিয়ে আসছে। বিজিবি’র পক্ষে সবাইকে পরীক্ষা করাও সম্ভব না। বিশেষ করে যখন ঢল নামে, হাজারে হাজারে মানুষ প্রতিরাতে পার হয়!
তবে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে অস্ত্র আসছে কিনা এমন কোন প্রমান এখনো বিজিবির হাতে নেই বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই লাখ লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। তারা জানে, এতো সংখ্যক মানুষের বস্তা, পোটলা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এরইমধ্যে বিজিবি যতোটুকু নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো সম্ভব, তা করেই লাখ লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৭
আরএম/জেডএম
** রোহিঙ্গা ফেরানোর প্রস্তাব, অন্যদিকে দেশ ছাড়তে মাইকিং!
** অক্টোবর ফার্স্ট নাইট অন শাহপরীর দ্বীপ