ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো ২৫৯৫ কোটি টাকার আবদার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো ২৫৯৫ কোটি টাকার আবদার! চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, (ছবি: বাংলানিউজ)

ঢাকা: চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশনে আরো ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অথচ চলতি বছরের ১০ আগস্টে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সম্প্রতি অনুমোদন দেওয়া হয়।

এই প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের ৫ লাখ ২৮ হাজার ঘনমিটার মাটি খনন এবং ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে।

পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে নালা তৈরি করা হবে ১ হাজার ৭৭ কিলোমিটার। প্রায় ১০৮ একর জমি অধিগ্রহণ ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে এক লাখ ৭৬ হাজার মিটার। ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে।

অথচ ১০ দিন না যেতেই পরিকল্পনা কমিশনে একই ধরনের আরেকটি প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ নামে প্রকল্পের আওতায় আরও ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে জুন ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে প্রতিরোধ দেয়ালের মাধ্যমে জোয়ার, ঝড় ও বন্যা থেকে চট্টগ্রামবাসীকে রক্ষা করা হবে। স্লইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে শহর এলাকায় লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ রোধ করাসহ জলবদ্ধতা নিরসন করা হবে। পাম্প হাউজ নির্মাণের মাধ্যমে দ্রুত শহর এলাকায় দ্রুত পানি নিষ্কাশন করাসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থাও উন্নত করা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর উত্তর তীরে এবং হালদা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। চট্টগ্রামে শহরের প্রাণকেন্দ্র কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে ১৫ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী মূল শিল্প এলাকাটি মূলত সমুদ্র বন্দর, পাহাড়তলী রেলওয়ে এলাকা, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম শহরে ভারী শিল্প এলাকা অবস্থিত।

চট্টগ্রামের পানি নিষ্কাশনে হালদা ও কর্ণফুলী নদী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট খালগুলির মাধ্যমে বর্জ্য নদীতে পড়ে। ২৩টি খালের প্রবাহ কর্ণফুলীতে এবং তিনটি খালের প্রবাহ হালদা নদীতে পড়ে। অন্যান্য ২৪টি খালের প্রবাহ পড়ে বঙ্গোপসাগরে।  

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ বৃষ্টির পানি ও কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত জোয়ার ভাটার যৌথ প্রভাব, যা শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। কর্ণফুলী ও হালদা নতীর তীরে কোনো উঁচু বাঁধ না থাকায় জোয়ার-ভাটার সময় শহরে নদীর পানি প্রবেশ করে। বেশিরভাগ খালগুলো পাহাড়ের কাঁদাযুক্ত পলি বহন করে। এগুলো সহজে ভরাট হয়ে পানিধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গৃহস্থালি ও শিল্প কারখানা থেকে সৃষ্ট কঠিন ও তরল বর্জ্যগুলো জোয়ার-ভাটায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এসব নিরসনেই প্রকল্পটির নেওয়া হচ্ছে।

অথচ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের সময় উপেক্ষিত ছিলো কর্ণফুলীতে নদীর তীরে বাঁধ দেওয়ার কাজ। ফলে নতুন করে আবারও এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (চট্টগ্রাম) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “জোয়ার-ভাটার সময় চট্টগ্রাম শহরে হঠাৎ হঠাৎ পানি প্রবেশ করে। এটা ঠেকাতে খালের মুখে বাঁধ দেবো। কর্ণফুলি নদীর ডান তীরে বিশাল বিশাল বাঁধ দেবো। ফলে আর কোনো পানিই চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করবে না। পানি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্লুইস গেটও নির্মাণ করবো। জলাবদ্ধ চট্টগ্রামকে রক্ষার্থে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ৩৬টি খাল খনন করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এই কাজ পেয়েছে সিডিএ। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি সিডিএ’কে অনুমোদন দেয়া হয়। ”

আগের প্রকল্পে কেন কর্ণফুলী নদীর ডান তীর রক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আগের প্রকল্পের থেকে নতুন প্রকল্পের কাজ ভিন্ন। তারা (সিডিএ) এক ধরনের কাজ করবে আমরা অন্য ধরনের কাজ করবো। ”

বাংলাদেম সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
এমআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।