ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জীবনযাপন

ঈদ শপিং, ঈদের প্রস্তুতি ও ইসলামের নির্দেশনা

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
ঈদ শপিং, ঈদের প্রস্তুতি ও ইসলামের নির্দেশনা ঈদ শপিং, ঈদের প্রস্তুতি ও ইসলামের নির্দেশনা

ঈদ মুসলমানের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম জাতির আনন্দের দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন ভালো পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা এবং মিষ্টান্ন খাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি (বিশেষ) জুব্বা ছিলো যা তিনি দুই ঈদ ও জুমার দিন পরিধান করতেন...। -সহিহ ইবনে খুজাইমা

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দিনের আনন্দ-উৎসব মুসলিম জাতির জন্য পবিত্র ও সার্বজনীন ঘোষণা করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘প্রতিটি জাতির উৎসবের দিন রয়েছে আর এটি আমাদের উৎসবের দিন। ’ –সহিহ বোখারি

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন মদিনাবাসী বছরের দু’দিন ক্রীড়া-কৌতুকে কাটাতো। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দু’দিনের বিশেষত্ব কি? তারা বললো, আমরা জাহেলি যুগ থেকেই এ দিনে ক্রীড়া-কৌতুক করি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদেরকে নতুন আরও উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন। ইয়াওমুল আজহা (কোরবানির ঈদ) ও ইয়াওমুল ফিতর (ঈদুল ফিতর)।  

এ হাদিসের আলোকে মুহাদ্দিসরা বলেন, ঈদে মুসলমানের উৎসব অবশ্যই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য তৈরি করে।

সুতরাং ঈদ ও ঈদকেন্দ্রিক প্রতিটি জিনিসেই ইসলামের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। তা কেনাকাটা হোক, খাওয়া-দাওয়া হোক বা বন্ধুদের অভিনন্দন জানানো হোক। অথচ আমরা ঈদকে নিছক উৎসবে পরিণত করেছি। ঈদের পবিত্রতা ও শিক্ষা ভুলে গেছি।

ঈদ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ নতুন পোশাক। সমাজের বদ্ধমূল ধারণা নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ হয় না। অথচ ইসলাম নতুন পোশাকের কথা বলেনি, বলেছে উত্তম পোশাকের কথা। ওপরে বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবী করিম (সা.) প্রত্যেক ঈদে একই পোশাক পরিধান করতেন এবং সেটিই ছিলো- তার পোশাকের মধ্যে সর্বোত্তম।

তবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যে নতুন পোশাক কিনতে নিষেধ করেছেন তা নয়; বরং নিষেধ করেছেন কেনাকাটায় সীমালঙ্ঘন করতে।  

হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত ওমর (রা.) বাজার থেকে একটি রেশমের কাপড় নিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিকট আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি ঈদের দিনের সৌন্দর্যবর্ধন ও ভ্রমণের সময় পরিধানের জন্য কিনবো কী? রাসূল (সা.) বললেন, এটি (রেশম) এমন পোশাক পরকালে যার কোনো অংশ নেই। -সহিহ বোখারি

এ হাদিসে রাসূল (সা.) রেশম- যা পুরুষের জন্য হারাম, তা থেকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু নতুন পোশাক কেনাকে নিষেধ করেননি।  

শুধু ঈদ নয়; সাধারণভাবে পোশাকের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশনা হলো- ‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পোশাক দিয়েছি যাতে তোমরা আব্রু রক্ষা করতে পারো এবং তা তোমাদের জন্য সৌন্দর্য হয়। আর খোদাভীতি জাগরুক করে এমন পোশাকই উত্তম। ’ -সূরা আরাফ: ২৬

বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন, এক. তা আব্রু রক্ষা করবে।
দুই. সৌন্দর্যের প্রতীক হবে।  
তিন. পোশাক হবে খোদাভীতির বা ইসলামি বোধ-বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।  

পোশাক-পরিচ্ছদসহ সব ধরনের কেনাকাটায় ইসলামের নির্দেশনা হলো- অপচয় ও অপব্যয় থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা প্রতি নামাজের সময় সৌন্দর্য্য গ্রহণ করো এবং তোমরা খাও এবং পান করো অপচয় করো না। ’ -আরাফ: ৩১

অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। ’ -সূরা আনাম: ৪১

সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, যদি যা ইচ্ছে তা খাও এবং যা ইচ্ছে তা পরিধান করো, তবে দু’টি মন্দ স্বভাব তোমাকে পেয়ে বসবে; অপচয় ও প্রবৃত্তিপূজা‍।

সুতরাং কেনাকাটায় অবশ্যই সংযত হওয়া আবশ্যক। শুধু প্রয়োজনমাফিক ব্যয়কেই ইসলাম অনুমোদন করে। কেননা প্রয়োজন ব্যতীত সম্পদ ব্যয় মানুষকে অবৈধ উপার্জনের দিকে ধাবিত করে। হিসেবছাড়া কেনাকাটা ও লাগামহীন উৎসব আনন্দ রমজানের ত্যাগের শিক্ষাবিরোধীও বটে।  

তাছাড়া ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা সাধারণত রমজানের শেষভাগে করা হয়। ঈদ শপিংয়ের সময় অনেকের নামাজের প্রতি খেয়াল থাকে না। অথচ এ সময়টাতে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবাদতে মগ্ন থাকতেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করতেন।

তাই আসুন! আমরা ঈদের কেনাকাটায় সংযত হই। ইসলামের নির্দেশনা মেনে ঈদের প্রস্তুতি গ্রহণ করি। শুধু নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য নয়; বরং সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু কেনাকাটা করি। আর রমজানের মূল্যবান কেনাকাটার পেছনে ব্যয় না করে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করতে সচেষ্ট হই।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।