ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

‘বাউ চিয়া’য় কমবে হৃদরোগের ঝুঁকি

বাকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
‘বাউ চিয়া’য় কমবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাউ চিয়ার ক্ষেত ও বাউ চিয়া

বাকৃবি (ময়মনসিংহ): দেশে হৃদরোগের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ রোগের ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ দুধ, ডিম ও মাংসে থাকা অধিক পরিমাণ কোলেস্টেরল যা হার্টের রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।

গবেষকরা দেখেন যে- বিদেশি ফসল ‘চিয়া বীজ’এ অধিক পরিমাণে ওমেগা-৩ রয়েছে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণার পর দেশের মাটিতে বিদেশি ফসল ‘চিয়া’ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন বাকৃবির গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভাবিত চিয়ার এ জাতকে ‘বাউ চিয়া-১’ (BAU Chia-1) নামকরণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ মার্চ ) সকাল ১০টার দিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন।

বাংলাদেশে কৃষকবান্ধব চিয়া চাষ পদ্ধতির প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চিয়া হলো মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি প্রধানত মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মায়। চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ আমিষ, চর্বি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও আঁশ থাকে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন। এছাড়াও চিয়া বীজে ভিটামিন (এ,বি,ই,ডি), সালফার, লোহা, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।

মানবদেহে চিয়া বীজের কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও চিয়া বীজের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় রেডিক্যালস বের করে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।  

দেশীয় আবহাওয়ায় চিয়ার চাষাবাদ সম্পর্কে ড. আলমগীর বলেন, ২০১০ সালে চিয়া বীজ দেশে নিয়ে আসি। এরপর বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগীয় মাঠে চার বছর ধরে চিয়া বীজের অভিযোজন পরীক্ষা করা হয়। অভিযোজন পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর তিন বছর ধরে চিয়া বীজের চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করা হয়। ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সংবাদ সম্মেলন

২০১৭ সালে দেশের পাবনা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও চারঞ্চলে চিয়া চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। এ উদ্ভিদে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেরশেও প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ দুই টন উৎপাদন করা সম্ভব।    

এদেশে চিয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. জাকির হোসেন বলেন, চিয়া বীজ শুকনো অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে চিয়া বীজকে বিভিন্ন খাবার যেমন দই, পুডিং বা বিস্ক‍ুটের সঙ্গে যোগ করে এর চাহিদা বাড়ানো যেতে পারে।

‘বাউ-চিয়া’ জাত উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খুব শিগগিরই এ জাতটি অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে নেওয়া হবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চিয়া চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদুল করিম, মো. আরিফ সাদিক পলাশ এবং আহাদ আলম শিহাব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad