ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে না! একটি ভ্রান্ত ধারণা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে না! একটি ভ্রান্ত ধারণা শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে না! একটি ভ্রান্ত ধারণা

শিশু জন্মগ্রহণের পর প্রায় প্রতি শিশু চিকিৎসকরাই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হন যে, শিশুরা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা-যার ফলশ্রুতিতে অনেকেই বাজারের সরবরাহকৃত বিভিন্ন বিকল্প টিনজাত দুধ, গরু বা ছাগলের দুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, কৌটার দুধ যে সব শিশু পান করে তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের চেয়ে বহুলাংশে কম।

তাছাড়া মাতৃদুগ্ধ রয়েছে ইমিউনোগ্লোবিউলিন ‘এ’ (ওমঅ) নামে একটি উপাদান যা শিশুদের জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশি বা ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে।

আমাদের করণীয়:

**মা-বাবা এবং পরিবারের সদস্যদের একমত হতে হবে এবং গর্ভকালীন সময় থেকে মাকে উৎসাহিত করতে হবে তার সন্তানকে শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করানোর জন্য।

** মা যখন গর্ভকালীন সময়ে এন্টিন্যাটাল চেকআপ-এ যাবে তখন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা মায়ের অন্যান্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার পাশাপাশি বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন এবং শারীরিক বা স্তনে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধানের চেষ্টা করবেন। শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে না! একটি ভ্রান্ত ধারণা** শাল দুধ বা কোলোস্ট্রাম- যা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে এটি গর্ভধারনের ২৮ সপ্তাহ থেকে শিশুর জন্মের প্রথম ৩ (তিন) দিন উৎপাদিত হয় যা হলুদাভ আঠালো পিচ্ছিল একটি পদার্থ। শিশুর জন্মের পর প্রথম ৩ (তিন) দিন এটাই শিশুর খাদ্য। এর মধ্যে কোনো অবস্থাতেই গ্লুকোজের পানি, মিশ্রির পানি বা ফলমূলা দুধ দেওয়া যাবে না। পূর্ণ ৬ (ছয়) মাস অর্থাৎ ১৮০ দিন শুধু বুকের দুধ পান করাতে হবে।

** পজেশনিং এবং এটাচমেন্ট: শিশুর বুকের দুধ পান করানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এন্টিন্যাটাল চেক আপের সময়  গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা এটা মাকে অবশ্যই শিখিয়ে দেবেন। শিশু জন্ম গ্রহণের পর শিশু চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা সেখাবে।

** মনে রাখতে হবে একটা শিশু যদি ২৪ ঘণ্টায় ৬ থেকে ৮ বার প্রশ্রাব করে তাহলে সে অবশ্যই বুকের দুধ পাচ্ছে।

** একটা বুধের দুধ সম্পূর্ণ শেষ করার পর আরেকটা খাওয়াবেন। একটা খাওয়ানোর সময় আরেকটা পড়ে গেলে আমরা তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করি। এটা ভুল নিয়ম। কারণ বুকের দুধের প্রথম অংশে (ঋড়ৎব গরষশ) থাকে জলীয় অংশ এবং দ্বিতীয় অংশে থাকে শিশুর ওজন বৃদ্ধির উপাদান (ঐরহফ গরষশ)। তাই নিয়ম হলো একটা সম্পূর্ণ রূপে শেষ করার পর আরেকটা খাওয়ানো।

** ডেলিভারির পর মাকে প্রচুর পানি এবং পুষ্টিকর খাবার বেশী করে খাওয়াতে হবে। আগে যে পরিমাণ খেতেন তার চাইতে দু-মুঠো বেশী খাবেন। ঝাল, ভাজা পোড়া এবং তৈলাক্ত খাবার কম খাবেন।

** সব সময় বসে শিশুর মাথা উঁচু করে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শোয়ানো অবস্থায় খাওয়ানো খুবই বিপদজনক কারণ বুকের দুধ শোয়ানো অবস্থায় খাওয়ালে তা ফুসফুসে চলে যেতে পারে যা শিশুর জীবন বিপন্ন করে।

মনে রাখতে হবে একটা সুস্থ্য শিশু একটি পরিবারের যেমন সম্পদ তেমনি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাই প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিৎ, তাদের শিশুদের মায়ের দুধ পান করানোর ব্যাপারে। আশার কথা বর্তমান সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সব হাসপাতালের চিকিৎসকরা এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এ ব্যাপারে এখন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
এসএইচ

লেখক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বিপুল, সহকারী অধ্যাপক ঢাকা শিশু হাসপাতাল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।