ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

অটিজম নিয়ে দু’টি কথা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
অটিজম নিয়ে দু’টি কথা

শিশুরা নিষ্পাপ, ফুলের মতো তাদের আমরা সবাই খুব ভালোবাসি। শিশুর কথা, হাসি চলাফেরা থেকে শুরু করে সবকিছু এতো সুন্দর যে, তাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ড আমাদের আনন্দ দেয়, ভালোবাসা জাগায়। পিতা-মাতা, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবাই শিশুদের নিয়ে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করে।

আর অটিস্টিক শিশু তো এমন শিশু তারা একেবারেই নিষ্পাপ। তারা নিজের চাহিদা, অনুভূতি, আবেগ সুন্দরভাবে কিংবা মন খুলে প্রকাশ করতে পারে না।

এজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়।

অটিজম শব্দটা সম্পর্কে আগে আমাদের খুব একটা ধারণা ছিল না। এখন জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়েছে। তাছাড়া আমরা অনেকটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের পরিচিতদের মধ্যে অটিস্টিক শিশুর জন্মের সংখ্যা বাড়ছে।

পরিসংখ্যান মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ১.৪৭% সংখ্যক শিশু অটিস্টিক (সূত্র: অটিজম সোসাইটি)। তাছাড়া জাপানে ১.৬১% শিশু অটিস্টিক। বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকাতে ৩% শিশু অটিস্টিক। যদিও সারা দেশে এর গড় হার ০.১৫% (সূত্র: সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফর্মেশন)।

এ ধরনের শিশুর জন্ম হওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা চলছে। এ ধরনের শিশুরা নিজেদের খুব একটা প্রকাশ করতে পারে না। তাদের শব্দ ভাণ্ডার খুব বেশী থাকে না। তাই অনেক সময় একই কথা বার বার বলতে থাকে। এজন্য তাদের চাহিদার বিষয়টির প্রতি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া না দিলে প্রচণ্ডভাবে রেগে যায়। সহজে তাদের রাগ কমানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন সচেতন থাকলে তাদের শান্ত রাখতে খুব একটা সমস্যা হয়না।

অনেক সময় দেখা যায় যে, একজন অটিস্টিক শিশু তার আগ্রহের বিষয়টির দিকে খুবই পারদর্শী হয়। শিশু সুলভ কোন কোন আচরণের ক্ষেত্রেও তারা দারুণ মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়।

এক সময় মা’দের অবহেলা ও ব্যস্ততার জন্য শিশুদের অটিজম হয়েছে বলে ধারণা করা হতো। তবে এ ধারণার পক্ষে বিজ্ঞান সম্মত সমর্থন পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সমাজে সন্তানদের কোন কিছু হলেই মা’দের দোষ দেয়ার প্রবণতা চালু আছে। প্রকৃতপক্ষে অটিজম পুরোপুরি জেনেটিক কারণে নয়, চারপাশের অনেক কিছুই এর জন্য দায়ী।

বর্তমান বাস্তবতায় অটিজম সম্পর্কে আরো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ২ এপ্রিল ছিল বিশ্ব অটিজম দিবস। ২০০৮ সাল থেকে এটি বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

অটিজম ও অন্যান্য স্নায়ুজনিত রোগের জটিলতা বর্তমান সময়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য চিকি‍ৎসা সেবা বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। কেবল চিকিৎসা সেবা দিয়ে অটিজম আক্রান্তদের ভালো করা সম্ভব নয়। আক্রান্ত শিশুদের মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক সমস্যা সমাধানকল্পে কাজ করা প্রয়োজন।

এ ধরনের শিশুদের যত্নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে আশার কথা হলো, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পড়া-লেখার জন্য রাজধানী কেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট তথা অনেক শহরে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যাতে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা পড়া-লেখার পাশাপাশি তাদের মানসিক বিকাশ সাধনের সুযোগ পাচ্ছে।

বর্তমানে অটিজম শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়া, চিকিৎসা চাহিদা তৈরি ও নিত্য নতুন পন্থা বের হওয়ায় অটিজম নিয়ে শিক্ষিত সমাজের আগ্রহ বেড়েছে।

অনেক সময় যথাযথ জ্ঞান ও ধারণার অভাবের কারণে এ ধরণের শিশুদের সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে খুব একটা নেয়া হয় না। তাদের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বাবা মা ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

তবে বাস্তবতা অনেক সময় সুখকর নয়। অনেক সময় সমাজে দেখা যায় যে, শিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত পিতা অটিস্টিক শিশুর দায়িত্ব পালনে লজ্জাবোধ করেন। তিনি তার অবস্থানের কথা চিন্তা করে সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে শিশুটিকে খুব একটা নিয়ে যেতে চান না। এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে দিতে বারণ করেন। এ অবস্থায় শিশুটির মায়ের অবস্থান হয় করুণ। বাচ্চাটির মাও তার স্বামীকে বুঝানোর শত চেষ্টা করে নিজের অন্য সুস্থ সন্তানদের মতো অটিস্টিক শিশুর পর্যাপ্ত সুযোগ করতে না পেরে চরম হতাশায়
ভোগেন। এক সময় অসহায় বাচ্চাটির দিকে চেয়ে দেখা ছাড়া তার আর কিছু করার থাকে না।

আমাদের সমাজে আবার মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কিছু কাণ্ড ঘটে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন কোন অভিভাবকের আপত্তি থাকার কারণে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের পড়া-লেখার সুযোগ পেতে সমস্যা হয়। অথচ একটু সুযোগ করে দিলে এ ধরনের শিশুরাও সাধারণ শিশুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে।

অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের শিশুর পড়া-লেখার সুযোগ সৃষ্টির মানসে বাছাইকৃত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। অনেক সময় অটিস্টিক শিশুর পিতা-মাতা তাদের অবর্তমানে সন্তানদের ভবিষ্যৎ কিভাবে যাবে তা ভেবে হতাশায় দিন কাটান।

ভিভাবকদের হতাশা কমানোর জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকার এ ক্ষেত্রে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ তো শিশুদের নিয়ে অনেক কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনোনীত করেছে ১চ্যাম্পিয়ন ফর অটিজম ইন সাউথইস্ট এশিয়া রিজিয়ন’।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় আমাদের সমাজে অটিস্টিক শিশুদের জন্য আরো সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করা যায়, অটিস্টিক শিশুদের মঙ্গলকল্পে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

সৈয়দ ছলিম মো. আব্দুল কাদির: অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।