ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

লাখো শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে হ্যারিসনের রক্ত!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
লাখো শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে হ্যারিসনের রক্ত! লাখো শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে হ্যারিসনের রক্ত

ঢাকা: অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক জেমস হ্যারিসনের রক্ত অন্য সবার থেকে আলাদা। নবজাতকের এক মারাত্মক জটিলতা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় হ্যারিসনের রক্ত। ফলে কেবল রক্তদানের মাধ্যমে তিনি বাঁচিয়েছেন লাখ লাখ শিশুর জীবন।

৮১ বছর বয়সী হ্যারিসন গত ৬০ বছর ধরে নিয়মিত রক্তদান করে আসছেন। অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রসের তথ্য অনুসযায়ী তিনি জীবনে ১১শ বারেরও বেশি রক্ত দিয়েছেন এবং তার দান করা রক্তে বেঁচেছে প্রায় ২৪ লাখ শিশুর জীবন।

হ্যারিসনের রক্তে রয়েছে একটি বিরল এন্টিবডি, যা থেকে তৈরি হয় ‘আরএইচ ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ নামের ওষুধ। গর্ভবতী মায়েদের ফেটুসে ‘আরএইচ ইনকম্প্যাটিবিলিটি’ দেখা দিলে ওই মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফেটুসের লোহিত রক্তকণিকাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। এর ফলে নবজাতকের ব্রেইন ড্যামেজ, জন্ডিস, গর্ভাবস্থায় মৃত্যুসহ বেশ কিছু জটিল সমস্যা উদ্ভব হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে হ্যারিসনের রক্ত থেকে তৈরি বিশেষ ওষুধটি প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এটা কীভাবে কাজ করে?

মানুষের রক্তের একটি বিশেষ প্রোটিনকে ‘আরএইচ ফ্যাক্টর’ বলা হয় যা লোহিত কণিকায় অবস্থান করে। যখন কারও রক্তে এই প্রোটিনের পর্যাপ্ত উপস্থিতি থাকে, তখন তাকে ‘আরএইচ পজেটিভ’ বলে। আর এর স্বল্পতাকে বলা হয় ‘আরএইচ নেগেটিভ’। এ কারণেই রক্তের গ্রুপ পজেটিভ ও নেগেটিভ এ দু’রকমের হয়।

সাধারণ মানুষের দেহে পজেটিভ বা নেগেটিভ রক্ত তেমন কোনো বৈচিত্র্য আনে না। কিন্তু গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে যদি মায়ের রক্ত নেগেটিভ এবং গর্ভের সন্তানের রক্ত পজেটিভ হলে ভয়ানক সমস্যা দেখা দেয়।

কারণ, গর্ভাবস্থায় শিশুর পজেটিভ রক্ত কণিকা মায়ের রক্তপ্রবাহে লিক করতে শুরু করে। এক্ষেত্রে মায়ের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ওই পজিটিভ রক্ত কণিকাগুলোকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করে এবং সেগুলোর বিপরীতে এন্টিবডি প্রস্তুত করতে থাকে। এই এন্টিবডি অনেকসময় প্লেসেন্টা (মায়ের যে অঙ্গের মধ্যে শিশুর পুষ্টি সরবরাহ এবং শ্বাসযন্ত্র চালনা হয়) অতিক্রম করে ফেটুসের লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করতে শুরু করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নবজাতকের স্বাস্থ্য জটিলতা ও মৃত্যুর অন্যতম হচ্ছে ‘আরএইচ ইনকম্প্যাটিবিলিটি’।

মায়েদের রক্ত আরএইচ নেগেটিভ হলে এ ধরনের বিপদ প্রতিরোধে চিকিৎসকরা গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে আরএইচ ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রদান করেন। সাধারণত গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহ পর এবং জন্মদানের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাকে এই ওষুধটি নিতে হয়।

অস্ট্রেলিয়ার ১৭ শতাংশ মাকে এই চিকিৎসার মধ্যদিয়ে যেতে হয়। এমনকি হ্যারিসনের মেয়েকেও সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য এই চিকিৎসা নিতে হয়েছে।  

যদিও এই বিশেষ রক্ত থেকে তৈরি এন্টিবডি এই জটিলতা কীভাবে দূর করে তা গবেষকদের কাছে পরিষ্কার না। তারা মনে করেন, এই এন্টিবডি মায়ের রক্তপ্রবাহে থাকা ফেটুসের পজিটিভ রক্ত কণিকাগুলোর চারপাশে আবরণ তৈরি করে, যার ফলে মায়ের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সেগুলো দেখতে পায়না।  

তবে হ্যারিসনের মতো সবার রক্তে এই বিশেষ এন্টিবডি জন্মায় না। অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রসের মতে, গোটা অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ২০০ জনের থেকে এই বিশেষ রক্ত সংগ্রহ করা হয়।  

আর ১৪ বছর বয়সে রক্তগ্রহণ প্রক্রিয়া দিয়ে যেতে হয় হ্যারিসনকে। চিকিৎসকদের মতে, এরপরই তার রক্ত আরএইচ পজেটিভ রক্তকণিকার বিপরীতে এন্টিবডি উৎপাদন শুরু হয়। হ্যারিসন নিজেও আরএইচ নেগেটিভ।

গত ১১ মে জীবনে শেষবারের মতো রক্তদান করলেন হ্যারিসন। কারণ রক্তদানকারী হিসেবে তার বয়সসীমা পার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রস।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।