ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

আইপিও’র ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থ সিমটেক্স

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
আইপিও’র ২৮ শতাংশ অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থ সিমটেক্স

ঢাকা: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া ৬০ কোটি টাকার মধ্যে ১৭ কোটি টাকা (২৮ শতাংশ অর্থ) ব্যয় করেনি সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

কোম্পানির পক্ষ থেকে ডিএসইকে পাঠানো গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আইপিও’র অর্থব্যয় পযালোচনার এক প্রতিবেদনে এমন নেতিবাচক চিত্রই দেখা গেছে।

প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোম্পানিটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।

যা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) উচিৎ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা আইনের আওতায় এনে কোম্পানিটিকে শাস্তি দেওয়া। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো কোম্পানি এসব করতে না পারে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দক্ষতার অভাব ও অদূরদর্শিতার কারণেই কোম্পানির এমন নাজুক দশা।

তিনি আরও বলেন, কোম্পানির ভবিষৎ নির্ভর করে এর সুদক্ষ পরিচালনার ওপর। কিন্তু সেটা করতে তারা অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ২০১৫ সালে চারটি খাতে ব্যয়ের জন্য ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পনিটি। কথা ছিলো, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আইপিও’র সব অর্থ প্রতিশ্রুত খাতে ব্যয় শেষ করবে তারা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের ১৭ কোটি ৭ লাখ ২হাজার ৭৯৪ টাকা ব্যয় করেনি। যা শতাংশের হিসাবে ২৮ শতাংশ।

কোম্পানির তথ্য মতে, আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার সময় কোম্পানিটি আইপিও খরচ বাবদ ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, কোম্পানির ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট বাবদ ৩১ কোটি ৬২ লাখ ২৯ হাজার টাকা, ব্যাংক লোন পরিশোধ বাবদ ২০ কোটি টাকা এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোম্পানিটি আইপিও’র ব্যয়, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল খাতে ব্যয় এবং ব্যাংক লোন পরিশোধ করলেও ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট বাবদ মাত্র ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ২০৬ টাকা ব্যয়ে করেছে। এ খাতে এখনো ব্যয় করা বাকি রয়েছে ১৭ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৭৯৪ টাকা।

নির্ধারিত সময়ে এই টাকা ব্যয় করতে না পেরে কৌশলে ও চাতুরি করে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) নতুন করে সময় বাড়িয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও) সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রধান কার্যালয়ের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে সেটিও বন্ধ পাওযা যায়।

এরপর কোম্পানির ইমেইলে এসব অনিয়মের কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কোনো উত্তর মেলেনি।

এরপর সোমবার (১১ডিসেম্বর) দুপুরে কোম্পানির শেয়ার ডিভিশনে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করে দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, এমডি ও চেয়ারম্যান সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে না।

সিএফও সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি দেশের বাইরে আছেন, ২০ ডিসেম্বরের পরে দেশে ফিরবেন। তারপর কথা বলতে পারবেন।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নির্ধারিত সময় আইপিও’র অর্থ ব্যবহার না করার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হবে। এরপর স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করা হবে।

বিএসইসি’র একাধিক কর্মকর্তারা জানান, কিছু কোম্পানি যে সময়মতো আইপিওর টাকা ব্যয় করছে না বা কাজে লাগাচ্ছে না তা কমিশনের পর্যবেক্ষণে আছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

বিনিয়োগকারীদের অনেকেরই অভিযোগ, ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে কোম্পানটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। সোমবার কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯ দশমিক ৬০ টাকা দরে। ২০১৭ সালে কোম্পানি নিজ শেয়ারহোল্ডারদের ২ শতাংশ ক্যাশ এবং ১০ শতাংশ বোনাস এবং ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ ক্যাশ এবং ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এমএফআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।