ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং

৩ মাসে সোনালী ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
৩ মাসে সোনালী ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক তিন মাসে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে। ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় সুদ মওকুফের মাধ্যমে তা পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে ব্যাংকটি।
 
 

এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার পরও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ কমছে না। ব্যাংকটির বর্তমানে খেলাপি ঋণ ১১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।

আর ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণ ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে (জানুয়ারি-জুন) যা বেড়েছে ১১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা।
 
সুদ মওকুফ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) সোনালী ব্যাংক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৪৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে।  
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত দু’টি বিষয় বিবেচনা করে ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়। একটি- দীর্ঘদিন ধরে যেসব ঋণ পরিশোধ করা না হয়। এককালীন পরিশোধের শর্তে ওইসব ঋণের কিছু সুদ মওকুফ করা হয়। এজন্য ব্যাংক যেন লোকসানের সম্মুখীন না হয় সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়।
 
অপরদিকে ঋণ পুনঃতফসিলের সময় কিছু সুদ মওকুফ করা হয়। এর ফলে একদিকে ব্যাংকের দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণ আদায় হয়। অন্যদিকে ওই ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বেড়ে যায়। আয়ও বাড়ে।
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। আর রাজনৈতিক প্রভাবেই সুদ মওকুফ করা হচ্ছে, যা ব্যাংকিং শৃঙ্খলার পরিপন্থি। সুদ মওকুফ করায় একদিকে যেমন ব্যাংকের আয় কমে যায়, পাশাপাশি নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন এমন গ্রাহকদের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে বেড়ে যায় ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা।
 
বিশ্লেষকদের দাবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক চাপে সুদ মওকুফ করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদ মওকুফ করে নেন। যার প্রভাবে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা ব্যাংক আমানতকারীদের সুদ ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে। কিন্তু ঋণের সুদ আদায় না হওয়ায় বেড়ে গেছে ব্যায়।
 
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুদ মওকুফের মাধ্যমে একটি খাত বা ব্যক্তিকে সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু সুদ মওকুফ বেশিরভাগ সময় যথাযথভাবে করা হয় না। অনেকেরই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকে। আর এ যোগসূত্রের ভিত্তিতেই রাজনৈতিক চাপের মাধ্যমে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সুদ মওকুফ করে থাকে। এ কারণেই সরকারি ব্যাংকগুলোর বেহাল অবস্থা।
 
শুধু সুদ মওকুফের ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব থাকে না, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক চাপ থাকে। যেমন- ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক ব্যাংকে যে জামানত দেয় তা যথাযথ হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধকি জমি বা সম্পদ অতিমূল্যায়িত করারও অভিযোগ রয়েছে। যাতে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলেও গ্রাহকের লোকসানের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।  
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ মওকুফ করানো হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে। আগের চেয়ে এখন ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক চাপ, স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে সরকারি ব্যাংকে সুদ মওকুফ বেড়ে গেছে। এভাবে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। সুদ মওকুফ বেশি হওয়ায় ব্যাংকের আয়ও কমে যাচ্ছে।
 
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণের সুদ মওকুফে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উত্থাপনের পর অনুমোদন হলে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, আগস্ট, ১৯, ২০১৭
এসই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad