ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

বসন্তে প্রাণবন্ত আড়িয়ল বিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
বসন্তে প্রাণবন্ত আড়িয়ল বিল আড়িয়ল বিলের লাউ। ছবি: আল মামুন

মুন্সীগঞ্জ: বসন্তে বদলে গেছে আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য। শীত শেষের বসন্তেও এখন এ বিলজুড়ে হাসছে শাক-সবজির ক্ষেত। রোপন করা ধানের জমির ফাঁকে ফাঁকে জলাধারে মিলছে হরেক প্রজাতির মাছ। ক্ষেতের আইলে আলো ছড়াচ্ছে মিষ্টি কুমড়‍া-লাউ। দল বেঁধে শাক তুলছে কিশোরীর দল। মৌসুমের কিছুটা অবসরে মেলা বসছে বিভিন্ন স্থানে। সবমিলিয়ে তাই বসন্তে অনেক প্রাণবন্ত আড়িয়ল বিলের জীবন-জীবিকা।

ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলায় এই জলাভূমির অবস্থান। তবে বেশির ভাগ অংশ পড়েছে মুন্সীগঞ্জে।

মুন্সীগঞ্জের ৭ হাজার ৯৭০ হেক্টর আবাদযোগ্য ভূমি রয়েছে আড়িয়ল বিলে। বছরের সব ঋতুতেই এখানে ফলন হয়। বর্ষায় মাছে ভরা থাকে। এই মাছ পাওয়া যায় মাঠ শুকানোর আগ পর্যন্ত।

শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের গাদিঘাটা এলাকায় পাইকারী করলা ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আড়িয়ল বিলে প্রচুর করলা হয়। এখান থেকে আমরা মাল কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর ইত্যাদী এলাকার আড়তে পাঠাই। সেখান থেকে যায় সারা বাংলাদেশে। প্রতিদিন শ’চারেক মণ করলা এখান থেকে বাজারজাত হয়। আড়িয়ল বিলের মেলা।  ছবি: আল মামুন

কুমড়ার এবার ফলন ভাল হওয়ায় খুশি স্থানীয় ছালাম মিয়া। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আড়িয়ল বিলের মিষ্টি কুমড়া সেরা। আমার পাঁচটি ভিটায় এবার ৫/৬ গাড়ি (মাঝারি ট্রাক) কুমড়া হয়েছে। এখানকার একটি কুমড়া সর্বোচ্চ দেড় মণেরও বেশি  হয় এবং বিভিন্ন সাইজের হতে পারে। এখান থেকে ভাল লাভ হয়েছে এবার। ষোল আনার মধ্যে চারআনা খরচ আর বারো আনাই লাভ। ফালগুনে প্রতিদিন আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অন্তত ১০ ট্রাক কুমড়া বাজারে যায়। মাঠে এখনও অনেক কুমড়া আছে।

সবুজ ধান ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে কয়েক হাজার ভিটায় ফলে আরো নানা ফসল। লাউ, কলা, বেগুন ইত্যাদি ফলে এখানে। ক্ষেতের আইলে (দুই ক্ষেতের মাঝে সরু রাস্তা) পাওয়া যায় হেচি শাক, ক্ষুদুইরা শাক ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের শাক। এখানকার মানুষের অনেক কিছুই কিনে খেতে হয় না, বিলেই পাওয়া যায়। এখানকার নারী-কিশোরীদের অবসরের সবচেয়ে ভাল বিনোদন দল বেঁধে শাক তোলা। মোট কথা, উৎপাদনশীল আড়িয়ল বিলকে সবাই উপভোগ করে যে যার যার মতো। লাউ নিয়ে নিজের ভিটা থেকে ফেরার সময় আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের খাবার নিয়ে আল্লাহর রহমতে চিন্তা করতে হয় না।

শীত জুড়ে শুকিয়ে আসা পুরো বিলের অসংখ্য জলাধারে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মাছ। মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকেই। বশির মিয়া বলেন, আমার ভিটার পাশে একটা ডোবা আছে, সেখান থেকে ভাল পরিমাণ মাছ পাই। আত্মীয়-স্বজন নিয়ে খাওয়ার পরেও বিক্রি করা যায়। সব মিলিয়ে ভাল আছি। আড়িয়ল বিলের করল্লা।  ছবি: আল মামুন

বসন্তে আড়িয়ল বিলের আশপাশের মানুষের আপাতত কর্মব্যস্ততা তুলনামূলক কম। তাই এখানে বিভিন্ন জায়গায় বসে মেলা। বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় ওয়াজ মাহফিল। বিল পাড়ের মানুষে সব ঋতুতেই এমনই ভালো থাকে, প্রাণবন্ত থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।