ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

শঙ্কায় সিলেটের বোরো চাষিরা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
শঙ্কায় সিলেটের বোরো চাষিরা সিলেটে বোরোর আবাদ-ছবি-বাংলানিউজ

সিলেট: বসন্তের বাতাসে দোল খাচ্ছে ধানগাছ। তাকে জড়িয়ে ধরে সোনালী আলোর ঝিলিক ছড়াচ্ছে শিশির বিন্দু। ক’দিন পরেই সবুজের শামিয়ানা জুড়ে আসবে সোনালী ধানের ঝিলিক। এই রঙিন স্বপ্নেই এখন বিভোর হয়ে আছেন সিলেটের চাষিরা। কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাহাড়ি ঢল আর পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

গত শুক্রবার (১০ মার্চ) থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। উজানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পানি বেড়েছে হাওরগুলোতে।

সিলেটে বোরোর আবাদ-ছবি-বাংলানিউজসরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেটের কুশিয়ারা ও জুড়ি নদীতে উজানের ঢলে পানি বেড়েছে। সেইসঙ্গে হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে পানি বাড়লে নিম্নাঞ্চলের ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

দেশের অন্যস্থানে শিলাবৃষ্টি হলেও সিলেট অঞ্চলে এখনো হয়নি। এতে সিলেটের কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা করছেন।  

এই সময়ে ধান গাছে থুর (ফল) বেরোলেও পোকার আক্রমণের আশঙ্কায় রয়েছেন হাকালুকি পাড়ের কৃষক আব্দুল মালিক। তিনি জানালেন, ধানে পোকার আক্রমণ নিয়ে তার মতো অন্য কৃষকেরাও চিন্তিত।  

কৃষকেরা বলছেন, এ বছর সিলেটের হাওরে পানি নেমেছে দেরিতে। যে কারণে ধান রোপন শেষ করতেই বিদায় নিয়েছে পৌষ।

সিলেটের হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়া, শনির হাওর, দেখার হাওর, হাইল হাওরের ধানগাছে এখন থুর (ফল) দেখা যাচ্ছে।  

সিলেটে বোরোর আবাদ-ছবি-বাংলানিউজকৃষক কাহিদ আহমদ বাংলানিউজকে জানান, এবার প্রায় ৪ কেদার (১২০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন। এরইমধ্যে কিছু জমিতে ধান গাছ ঘন সবুজ রং ধারণ করেছে। কোনো জমিতে ধানে থুর এসেছে। তবে আগাম থুর আসা ধানে পোকায় আক্রমণ করেছে। পোকার আক্রমণ কম হলে কাঙ্ক্ষিত ফসল পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।  

ফেঞ্চুগঞ্জের ঘিলাছড়া ইউনিয়নের হাকালুকি পাড়ের কৃষক শাহজাহান আহমদ বাংলানিউজকে জানান, এ বছর ১৭ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকলে ভালো ফলন হবে।  

সিলেটে বোরোর আবাদ-ছবি-বাংলানিউজহাওরের নিম্নাঞ্চলের ধান তলিয়ে না গেলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণে ক্ষতি না হলে এবার বৃহত্তর সিলেটে বোরো ধান থেকে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।  

এ বছর দেরিতে বোরো আবাদ হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন সম্ভব মনে করেন সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষ্ণচন্দ্র হুড়।  

সিলেটে বোরোর আবাদ-ছবি-বাংলানিউজকৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে বোরোর আবাদ করেছেন এমন কৃষকের সংখ্যা ১১ লাখ ৮১ হাজার ১১৩ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৪ জন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯ জন, হবিগঞ্জে ২ লাখ ৮৫ হাজার ২২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে ৩ লাখ ২০ হাজার ৮৪৫ জন কৃষক আবাদ করছেন।

এবার সিলেটের চার জেলায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমিতে বোরোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৭৬ হাজার ৮৩৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৫০ হাজার ৪৬৪ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬শ’ হেক্টর, সুনামগঞ্জে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
এনইউ/আরআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।