রাজধানীর ইসলামপুরের পর থান কাপড়ের (গজ-কাপড়) দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি বিপণিকেন্দ্র টেরিবাজারের চিত্র এটি। শুক্রবার (২৫ মে) রাতে সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্রই দেখা গেল।
একসময় থান কাপড়ের জন্য বিশেষভাবে খ্যাতি পেলেও কালের পরিক্রমায় এখন বিশাল বিশাল অনেক শোরুম হয়েছে। যেখানে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে একই ছাদের নিচে থান কাপড়ের পাশাপাশি শাড়ি, লুঙ্গি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, শার্ট, জুতা, গহনা সবই মিলছে।
ইব্রাহিম ম্যানশনের দ্বিতীয়-তৃতীয় তলা মিলে মেগামার্ট। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধু পুরুষের সামগ্রীই বিক্রি হতো। এবারই প্রথম নারীদের পোশাক তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। রমজান শুরুর পর সপ্তাহের প্রথম ছুটির দিনে দেখা গেল উপচেপড়া ভিড়।
বিক্রয়কর্মী এম নূর আহমদ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, একই ছাদের নিচে সব পরিধেয় সামগ্রী রয়েছে মেগামার্টে। শিশুদের পোশাকে সুতোর কাপড়ের চাহিদা বেশি। ২২০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার পোশাক রয়েছে শিশুদের।
বিক্রয়কর্মীরা জানান, একটি প্যান্ট তৈরির জন্য থান কাপড় সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তৈরি ত্রিপিস ও গাউন ২ হাজার ২০০ থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকায়, পাঞ্জাবি ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
মাসুম ক্লথ স্টোরে কথা হয় রাউজান থেকে আসা প্রবাসী আবদুল করিমের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক ছাদের নিচে পরিবারের সবার জন্য সুলভে কেনাকাটা করা যায় বলেই এখানে আসা। বাজেট অনুযায়ী শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস সব পাচ্ছি টেরিবাজারে।
টেরিবাজারে অন্যান্যবারের মতো এবারও ক্যাটালগ অনুযায়ী প্রচুর পাঞ্জাবি ও থ্রিপিস পাওয়া যাচ্ছে। ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে অগ্রণী ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মীরা জানান, ক্যাটালগ অনুযায়ী সেলাই ছাড়া প্রতিটি পাঞ্জাবির কাপড় ১ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাবলি ড্রেসের কাপড় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা।
সবান্ধবে পাঞ্জাবির কাপড় কিনতে এসেছে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র সরওয়ার উল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তৈরি পাঞ্জাবি কম টেকসই বলে প্রতিবছর বন্ধুরা টেরিবাজার থেকে গজ কাপড় কিনে একই রকম ঈদের পাঞ্জাবি সেলাই করি। এবারই পাঞ্জাবির কাপড় পছন্দ করতে এলাম। এখনো দেখাদেখির পর্যায়ে রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে কিনে ফেলতে হবে। নয়তো দরজিবাড়ি নেবে না।
ব্লাউজ তৈরির কাপড় বেক্সি কাপড়ের গজ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। কমদামি আছে গজ ৭০ টাকা। ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টাকা দামের লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে লুঙ্গির দোকানে।
সানমুন ট্রেডার্সে সুতোর শাড়ি ৩০০-৬০০ টাকা, ইন্ডিয়ান জর্জেট শাড়ি ২-৩ হাজার টাকা, কাতান শাড়ি ৪-৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, শতাধিক বিপণিকেন্দ্র (মার্কেট) নিয়ে টেরিবাজার। ছোট-বড় মিলে দোকান হবে প্রায় ২ হাজার। টেরিবাজারে একসময় শুধু থান কাপড় ও রেডিমেড পোশাক পাইকারি বিক্রি হতো। কিন্তু যখন এখান থেকে কাপড় নিয়ে শপিং সেন্টারগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হতে শুরু করে তখন টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরাই সুলভে খুচরা বিক্রি শুরু করেন। একপর্যায়ে মাসুম ক্লথ স্টোর, মেগামার্ট, রাজস্থান, পরশমণি, বৈঠকবাজার, মোহাম্মদিয়াসহ অনেক বড় বড় শোরুম খোলা হয়। এখন এক ছাতার নিচে জামা-জুতো থেকে শুরু করে সব কিছুই মিলছে টেরিবাজারে। পাশাপাশি পাইকারি বেচাকেনাও রয়েছে আগের মতোই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে পার্কিংয়ের কিছুটা অসুবিধা রয়েছে। তবে নতুন বিপণিকেন্দ্রগুলোতে পার্কিং রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য আমরা ৩২টি ক্লোজসার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসিয়েছি। সারা বছরের বাইরে ঈদ উপলক্ষে ২৬ জন অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এআর/টিসি