ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গৃহকর: স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে মেয়র নাছিরের চিঠি

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
গৃহকর: স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে মেয়র নাছিরের চিঠি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন

চট্টগ্রাম: ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারের বারটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহকর বাবদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)বকেয়া ও হালসহ ১১২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ পাওনা পরিশোধে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থামূহের প্রধানদের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপরেও তেমন কোন সাড়া মেলেনি।

এদিকে পঞ্চ-বার্ষিকী গৃহকর অ্যাসেসমেন্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থগিত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গৃহকর আদায় করতে পারছে না চসিক। এর ফলে চসিকে নাগরিক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

পাশাপাশি চসিকের আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে।    

এমতাবস্থায় বারটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া ও রেইট পরিশোধের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক চান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৪ মে) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বারটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া গৃহকর ও রেইট আদায়ে জরুরি ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক আহবানের অনুরোধ জানিয়ে একটি দাপ্তরিক চিঠিও পাঠিয়েছেন সিটি মেয়র।

চিঠিতে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়ের মূল উৎস গৃহকর ও রেইট। গত ২০১৫ সালে জাতীয় স্কেল অনুযায়ী সিটি করপোরেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ২২০ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১১-১২ অর্থবছরে পঞ্চ-বার্ষিকী অ্যাসেসমেন্ট অনুযায়ী গৃহকর ও রেইটের দাবি ১১৯ কোটি ২৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫৩৪ টাকা। যা বার্ষিক বেতন ভাতা বাবদ ব্যয়ের পরিমাণের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া এ দাবির একটি বড় অংশ বকেয়া থাকায় চসিক চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং নাগরিক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দূরুহ হয়ে পড়েছে। নগরবাসীকে কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা না গেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিটি করপোরেশনস্থ আসনগুলোর ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। ’

বকেয়া গৃহকর ও রেইট আদায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক চেয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বারংবার জানানোর পরও সরকারি সংস্থাগুলো চসিকের হাল গৃহকর পরিশোধ করলেও নানা অজুহাতে বকেয়া গৃহকর পরিশোধ করছে না। ইতিমধ্যে এসব সংস্থার প্রধানদের সাথে একাধিকবার বৈঠকও করেছি। কিন্তু তেমন কোন সুফল পাইনি। তাই মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানাতে হলো। এছাড়াও আলাদাভাবে এসব মন্ত্রণালয়গুলোর মন্ত্রী ও সচিবকেও বকেয়া গৃহকর বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিটি মেয়র আরও বলেন, ‘বাজেটের আগে যদি ওই সকল প্রতিষ্ঠানের গৃহকরের জন্য বরাদ্ধ চায়, তাহলে বরাদ্ধ পাওয়া যাবে। সরকারি সংস্থাগুলো যদি গৃহকর পরিশোধ করে তাহলে সাধারণ জনগণও বকেয়া গৃহকর পরিশোধ করতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।

এসব বিষয় বিবেচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক জরুরি বলেও মন্তব্য করেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।

চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চসিক ১২টি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বকেয়া ও হালসহ গৃহকর ও রেইট বাবদ ১১২ কোটি ২৯ লাখ ৩ হাজার ৪৩১ টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৬১ টাকা, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৭০৮ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৪ কোটি ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫৩১ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩২ লাখ ৭২ হাজার ৬৬৬ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩ টাকা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৪ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৫ টাকা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ৬৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৮৬ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ৪৭ লাখ ৭ হাজার ২৫১ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ২ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১২ টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ৯৯০ টাকা, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ৩১ লাখ ৬১ হাজার ৭২৩ টাকা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২ কোটি ৪৯ লাখ ১ হাজার ৩৩৪ টাকা পাওনা রয়েছে।

কর পরিশোধ করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব উল্লেখ করে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগরের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে চসিকের বকেয়া গৃহকর ও রেইট আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে চসিক মেয়র বৈঠকও করেছেন। কার্যকরী তেমন কোন উদ্যোগ না নিয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বকেয়া গৃহকর আদায়ে নগরবাসীকে আরও উদ্যোগী হওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। ’     

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।