ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

একজন খাঁটি মানুষের চলে যাওয়া

চট্টগ্রাম প্রতিদিন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭
একজন খাঁটি মানুষের চলে যাওয়া বিনাজুরী নবীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনুষ্ঠানে গভর্নিং বডির সভাপতি এ কে জাফর খানসহ অতিথিরা

চট্টগ্রাম: ছিলেন নিখাদ ভদ্রলোক। ভালোবাসতেন গ্রামের মানুষদের, সবসময় ভাবতেন তাদের কথা। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠান-তার অবদানের ছোঁয়া লাগেনি এমন কিছুই যেন বাকি নেই।

তিনি এ কে জাফর খান। বিনাজুরী নবীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চলে গেলেন ৫ অক্টোবর রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।

বয়স হয়েছিল ৬৯ এর আশেপাশে।

ঘরের প্রিয় মানুষটা-অভিভাবকটা আর নেই।

ফিরে আসবেন না আর কখনও। ঘরজুড়ে তাই শূন্যতা। নিরব আহাজারি। এ কে জাফর খানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তার ছেলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র একান্ত সচিব নিয়াজ মোরশেদ নিরু।

বাবাকে হারিয়ে শোকাহত নিয়াজ মোরশেদ নিরু বলেন, ‘বাবার মতো প্রখর জ্ঞানী ও নিখাদ ভদ্রলোক আমি খুব কম দেখেছি। যারা আমার বাবার সঙ্গে একবার মিশেছেন, তাদের মন বাবা জয় করে নিয়েছিলেন। তিনি সবসময় গরিব, দুঃখী আর নির্যাতিত মানুষের কথা বলতেন এবং গোপনে তাদের সহায়তা করতেন। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে বাবার অবদানের কথা সবাই জানেন।

তিনি গর্ববোধ করে বলতেন, আমি শিক্ষক পিতার সন্তান। আমি মাথা উঁচু করে কথা বলবো। আমাদের সবসময় কোন কিছুতে অতিরিক্ত বা লোক দেখানো কাজ করতে নিষেধ করতেন। বলতেন মধ্যপন্থা নীতি অনুসরণ কর। জীবনে কষ্ট পাবে না। আমার সেই বাবাটা আর নেই। তিনি নেই, মানতে পারছি না। ’

বাবার শূন্যতা কখনও পূরণ হবে না জানিয়ে নিয়াজ মোরশেদ নিরু বলেন, তিনি আর কখনো নিরু বলে ডাকবেন না। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না। কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা বাবাকে পাব না। বাবা ছিলেন সকল কাজের প্রেরণা ও উৎসাহদাতা। আমার সব কিছুতে ছিল বাবার উৎসাহ।

তিনি আরও বলেন, বাবার খুব পছন্দ ছিল রবীন্দ্রসংগীত। বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তার ছিল গভীর জ্ঞান। উপমহাদেশের ক্ষমতা পট-পরিবর্তনের ইতিহাস আমরা বাবার কাছ থেকে শুনেছি, তিনি নিখুঁত ও সুন্দরভাবে বলতেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। তিনি বিভিন্ন মনীষী ব্যক্তির জীবনী নিয়ে বলতেন। বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগের পাড় সমর্থক। রাউজান কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় স্বাধীনতার বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর রাজনৈতিকভাবে আমার বাবার তেমন মূল্যায়ন হয়নি। এই নিয়ে তার মনে চাপা ক্ষোভ ছিল।

বাবার জন্য দোয়া চেয়ে নিরু বলেন, ‘বাবার অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে আপনারা আমাকে সহায়তা করবেন। ’

এ কে জাফর খান ছিলেন পুরোদস্তুর একজন খেলাপাগল মানুষ। ফুটবলে তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর বার্সেলোনার কড়া সমর্থক। ক্রিকেটে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভালোবাসতেন ভারতের খেলাও। প্রিয় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে তার ছিল তুমুল আগ্রহ। বুধবার (১১ অক্টোবর) মেসির হ্যাট্রিকে ঠিকই আর্জেন্টিনা জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে।

বেঁচে থাকলে হয়তো টিভির সামনে বসে পড়তেন এদিন ভোরে। কিন্তু সেই খেলা আর দেখা হলো না মানুষটার। তার পাঁচদিন আগ থেকেই যে তিনি ওপারের বাসিন্দা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।