মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড.নাসিরউদ্দীন আহমেদ। সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক।
গণশুনানিতে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে উঠে আসে পাঁচটি সেবা সংস্থার দুর্নীতি-হয়রানির কথা। এগুলো হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়।
সেবা সংস্থাগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির শুনে এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এমপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাঁশখালীতে এত দুর্নীতি হয় ! এখানে জনপ্রতিনিধি আছেন। এমপি সাহেব, আপনি কি কিছু শুনতে পাচ্ছেন ? আপনার কি কোন পদক্ষেপ আছে ?
জবাব দিতে দাঁড়ান এমপি। তিনি বলেন, আমার করার কিছু নেই। আমি আইনের কাছে অসহায়।
জেলা প্রশাসক বলেন, কিছু করতে পারেন না। চাইলে তো দালালদের একটা তালিকা করে আমাকে দিতে পারতেন। আপনি তো এখানে আছেন।
এমপি আরও কথা বলতে থাকলে সঞ্চালক হিসেবে জেলা প্রশাসক তাকে থামিয়ে দেন। পরবর্তীতে আরও কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে বলে জানান।
পরে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গত সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। সাংসদ নিজে বক্তব্য দিতে উঠে সেবা সংস্থা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে অনুসন্ধানের অনুরোধ করেন।
বাঁশখালীতে সাগর উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিষয়টি দুদককে অনুসন্ধান করে দেখার অনুরোধ করেন সাংসদ।
তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ভাল। কিন্তু পেপার-পত্রিকায় আমি দেখেছি কিছু অনিয়ম হচ্ছে। সেটা গত ১৭ আগস্ট পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভায় আমি উপস্থাপন করেছি।
দুদক কমিশনারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেড়িবাঁধের যে অনিয়ম হচ্ছে, আপনি একটা টিম গঠন করে তদন্ত করুন। এটা যাতে কোন অনিয়ম না হয়।
সাংসদ বলেন, কিছুদিন আগে আমি ইউএনও সাহেবসহ সব অফিসারদের নিয়ে আমি বসেছিলাম। আমি সেখানে বলেছি, আপনাদের বেতন হয় ওই গরীব মানুষের টাকা দিয়ে। গরীব মানুষ যদি আপনার দরবারে আসে, আপনার অফিসে আসে তাদের অবহেলা করবেন না। আমি জানিয়ে দিলাম, বাঁশখালীর কোন মানুষ যদি তার দাবিদাওয়া নিয়ে আসে সেটা মনযোগ সহকারে শুনবেন। অন্যথায় আমি কিছু করতে পারি বা না পারি, জনগণ নিয়ে আপনাদের অফিস আমি ঘেরাও করব।
দুদক কমিশনারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিনীত অনুরোধ, এলজিইডির প্রায় ২৮টা রাস্তার টেন্ডার হয়ে গেছে। ঠিকাদার কিছু কাজ করার পর বিল নিয়ে কাজ ফেলে চলে গেছে। উপজেলা ভবন দুই বছর মাটির নিচে। কাজ হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না, সেটা তদন্ত করে দেখুন। সেটা কি ঠিকাদারের কারণে নাকি অফিসের কারণে ? যার কারণেই হোক কাজ যাতে স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে হয় সেই ব্যবস্থা করবেন।
‘আমাদের এখানে যিনি টিএইচও (থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) সাহেব আছেন উনি মাসে দুইদিনও অফিস করেন না। বিভিন্ন কর্মকর্তাদের টাকা তুলে নাকি উনি ভাগ করে খেয়ে ফেলেন। আমি সিভিল সার্জনকে টেলিফোন করে বললাম, আপনার অফিসারকে বদলি করেন, না হলে মানুষ যদি তাকে গণধোলাই দেয় সেই দায়িত্ব আমি নেব না। উনি এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন করে বললেন, নতুন অফিসার দিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে জয়েন করবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জয়েন করলেন না। ’ বলেন সাংসদ
সেবা সংস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও হয়রানি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড.নাসিরউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্নীতি করে টাকাপয়সা কামাই করবেন না। আমরা আপনাদের সম্পদের অনুসন্ধান করব। যদি আয়ের চেয়ে সম্পদ বেশি হয়ে যায়, আপনাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি