গণশুনানির শুরুতে অনুপস্থিত থাকলেও জেলা প্রশাসক জরুরি তলব করে মহিউদ্দিনকে ডেকে আনেন। শুনানিতে হাজির মহিউদ্দিন এসময় সরাসরি এসব অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হন।
গণশুনানিতে উপস্থিত দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড.নাসিরউদ্দীন আহমেদ সার্ভেয়ার মহিউদ্দিনকে বরখাস্তের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
অমৃত কারণ নামে একজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, তিনি মহিউদ্দিনের অফিসে গেলে অনেক লোকের সামনে তাকে ‘বের হ, বের হ’ বলে বের করে দেন। মহিউদ্দিনের দুর্ব্যবহারে এসময় তিনি হতভম্ভ হয়ে যান। মহিউদ্দিনের অফিসে সারাক্ষণ দালাল বসে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষক।
জবাব জানতে চান জেলা প্রশাসক। জবাবে মহিউদ্দিন বলেন, আমি উনার সঙ্গে কখনো দুর্ব্যবহার করিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, মহিউদ্দিন, তোমার বিচার আর কি করব। শত, শত মানুষের সামনে তোমার বিচার হয়ে গেছে। এখন তুমি যদি বল আমার পিছনদিকে লাথি মেরেছে, গালে তো মারেনি, তাহলে বলব তোমার সেন্স এর অভাব আছে।
প্রবাসী হাজী আবুল হোসেন অভিযোগ করেন, পৌরসভায় তার মালিকানাধীন একটি বিরোধপূর্ণ দোকান ৬ লাখ টাকায় বিক্রির মধ্যস্থতা করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন দালালদের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
‘স্যার, মহিউদ্দিন নিজেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করে। আপনারা তো এই প্রথম আসছেন। মহিউদ্দিনের খোঁজখবর নেন। তার চারপাশে সবসময় দালালরা থাকে। দালালরা মানুষের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। ’ বলেন আবুল হেসেন
এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘দালাল কারা ? তাদের নাম বলেন। ’ জবাবে আবুল হোসেন বলেন, স্যার, দালাল সবাই চিনে। আমি নাম বললে ২০ টা মামলা দেবে। থানায় ধরে নিয়ে যাবে। ’
এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে আবুল হোসেন বলেন, স্যার, আমি মহিউদ্দিনের পায়ে ধরেছি। সে আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে।
এসময় জেলা প্রশাসক সার্ভেয়ার মহিউদ্দিনের কাছ থেকে জবাব জানতে চান। তিনি বলেন, উনাকে গলা ধাক্কা দূরে থাক, কখনো খারাপ আচরণও করিনি।
মহিউদ্দিন আঙ্গুল উঁচিয়ে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলে জেলা প্রশাসক বলেন, তুমি আঙ্গুল তুলে কথা বল কেন ? আমি ডিসি, এখানে দুদকের কমিশনার স্যার আছেন। আমাদের সামনে তুমি আঙ্গুল তুলে কথা বলছ। এটা তো তোমার স্বভাব।
জেলা প্রশাসক বাঁশখালীর ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ডেকে বলেন, মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠাও।
এরপর বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেনকে ডেকে জেলা প্রশাসক বলেন, আপনি দালালদের তালিকা করে মামলা দেন, গ্রেফতার করেন। এটা আইনে কাভার করে না এসব কথা বলবেন না। আইন দেখাবেন না।
তাজউদ্দিন আজাদ নামে একজন অভিযোগ করেন, নামজারির একটি আবেদন ২০১৪ সালে করে ২০১৭ সালেও প্রতিকার পাননি। সার্ভেয়ার মহিউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি ২০০ টাকা গাড়িভাড়া দাবি করেন।
জবাব চাইলে সার্ভেয়ার মহিউদ্দিন বলেন, উনি (তাজউদ্দিন আজাদ) গাড়ি ভাড়া দিয়েছেন কি না আমার মনে নেই।
মনুসর আলম নামে একজন বলেন, ‘সার্ভেয়ার মহিউদ্দিনের কাছে গেলে গলা ধাক্কা মারে, ধমক দেয়। ’
গণশুনানিতে পল্লী বিদ্যুতের উপ মহা ব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) আবুল বশরের বিরুদ্ধেও ঘুষ-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন গ্রাহকরা।
সিরাজুল ইসলাম নামে একজন অভিযোগ করেন, তার বসতবাড়ির মাটির নিচের তার সরানোর জন্য দেড় হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন এজিএম মোজাম্মেল।
ডিজিএম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উনি (সিরাজুল ইসলাম) নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেননি। সেজন্য দেরি হচ্ছে ঘুষ দাবি করিনি।
উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে মিটার সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ।
এসময় তিনি আরাকান ও মীর আহমদ নামে দুজন দালালের নাম প্রকাশ করেন।
জেলা প্রশাসক ডিজিএমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার অফিস দালালমুক্ত করে ভালোভাবে সেবা দেন।
বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি