২৫ জুলাই নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কয়েক শব্দের একটা লেখা দেন তিনি। সেখানেও তার ছবিপ্রীতির নমুনা মেলে।
বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেসব ছবি এখনও অক্ষত আছে। শুধু নাই হয়ে গেলেন এসব অন্যন্যসাধারণ ছবির সৃষ্টি যার হাতে সেই নাকিব মোহাম্মদ খাব্বাব।
একদিন আগে বেড়াতে গিয়ে সাগরে পড়ে নিখোঁজ হওয়া চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের (৪৩ তম ব্যাচ) এই ছাত্রের নিথর দেহ মিলেছে জেলেদের জালে।
খাব্বাবের দুটি চোখ আর ক্যামেরার ল্যান্সমুখী হবে না। খুঁজে বেড়াবে না অসাধারণ সব দৃশ্য। চোখ দুটি যে চিরতরেই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধু-স্বজনদের মনে তাই শূন্যতা, নিরব আহাজারি। তাকে হারিয়ে শোকে ভাসছে পুরো চুয়েট পরিবারও।
খাব্বাবের বন্ধু ও শিক্ষকরা জানান, মঙ্গলবার সকালে চুয়েটের ১০ জন শিক্ষার্থী মুরাদপুরের সাগরপাড়ে বেড়াতে যায়। বেড়ানো শেষে বেলা দেড়টার দিকে তাঁরা ফিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় নাকিবসহ তিন শিক্ষার্থী ও একজন অভিভাবক ওই এলাকায় বেড়াতে এলে তাঁরা পুনরায় সাগরপাড়ে ফিরে যান। তখন খাব্বাবসহ তিনজন শিক্ষার্থী পানিতে নামেন। তাঁদের পাশে তরুণীদের আরেকটি দলও পানিতে নামে। কিন্তু ওই দলের দুজন তরুণী কোমরপানি থেকে সামনে এগোতে গেলে স্রোতের তোড়ে ডুবে যেতে থাকেন। তখন খাব্বাবরা দুজন তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে যান। এসময় জেলেদের একটি নৌকাও তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। একপর্যায়ে ডুবতে থাকা দুই তরুণীকে উদ্ধার করা গেলেও খাব্বাব স্রোতে তলিয়ে যান। ।
এর প্রায় ২২ ঘণ্টা পর বুধবার দুপুর একটা ৪০ মিনিটে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা খালের দক্ষিণে জেলেদের জালে তার মরদেহ পাওয়া যায় বলে নিশ্চিত করেন চুয়েটের উপ-ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. জি. এম সাদিকুল ইসলাম।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় খাব্বাবের গ্রামের বাড়ি। কুমিল্লার ইবনে তাইমিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক সফিকুল আলম হেলালের চার ছেলের মধ্যে খাব্বাব ছিলেন সবার বড়। তবে খাব্বাবরা থাকতেন ঢাকায়।
খাব্বাবের ছবিপ্রেমের কথা তো আগেই বলা হলো। আরও দুটো প্রিয় ‘বদভ্যাস’ ছিল খাব্বাবের। এক-ঘুরে বেড়ানো। দুই-ফুটবল। ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পাড় ভক্ত। চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের ফুটবল টিমের সদস্যও ছিলেন তিনি। প্রথমটার নেশাই তাকে নিয়ে যায় সাগরপাড়ে।
খাব্বাবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন চুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইনজামাম উল হক।
তিনি বলেন, ‘খাব্বাব খুব বন্ধু অন্তপ্রাণ ছিল। ভালোবাসতো ঘুরতে, ঝোক ছিল ফুটবলে। ছবি তোলার বাতিক তো ছিলই। পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীলতায়ও নজির রেখেছিল আমার বন্ধু। অন্যদের ছবি তুলে, আনন্দ দিয়ে সারাক্ষণ হাসিখুশিতে মাতিয়ে রাখতো যে ছেলেটা, সেই চলে গেল সবার আগে। ’
এদিকে খাব্বাবের বাবা হজ করতে সৌদি আরবে রয়েছেন। তিনি ছেলেকে শেষবারের মতো দেখতে পাবেন কিনা তাও সন্দেহ।
খাব্বাবের সন্ধানে মঙ্গলবার থেকে সাগরপাড়ে চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়ে ছিলেন তার চাচাও। বুধবার দুপুরে খাব্বাবের মরদেহ নিয়ে তিনি ফিরছেন বাড়ির পথে। প্রিয় বন্ধুর অন্তিমযাত্রায় সঙ্গী হয়েছেন শোকাতুর বন্ধুরা।
এর আগে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে সীতাকুণ্ডে। কুমিল্লায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকায়। সেখানে শেষ জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানেই হবে তার শেষ ঠিকানা।
খাব্বাবের সহপাঠীরা জানিয়েছেন, আর কয়েকদিন পরেই বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল খাব্বাবের। তবে এদিন মরদেহ মেলার পর বুধবারই ফিরতে হচ্ছে খাব্বাবকে। স্ট্রেচারে শুয়ে, অ্যাম্বুলেন্সে চেপে সাদা কাপড়ে মোড়া খাব্বাব যেন একটু আগেভাগেই মায়ের কাছে ফিরলেন!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
টিএইচ/আইএসএ/টিসি