ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আবার ভাসবে মায়াবী ‘সুপারমুন’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৭
আবার ভাসবে মায়াবী ‘সুপারমুন’ সুপার মুন। ফাইল ফটো।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) রাতে যারা ‘সুপারমুন’ দেখতে পারেন নি, তাদের জন্য সুখবর। এই শীতে পরপর তিনটি পূর্ণিমায় আকাশ প্লাবিত করবে যৌবনবতী চাঁদ। বাংলা ১৪২৪ সালের শীতকালটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে তিনটি ’সুপারমুন’-এ কারণে। আগামী ২ জানুয়ারি এবং ৩১ জানুয়ারির পূর্ণিমাতেও পৃথিবীর কাছে থাকবে চাঁদ। পৃথিবীর আকাশ আবার ভাসবে মায়াবী ‘সুপারমুন’-এর রোমাঞ্চকর আলোয়।

অনেক বছর পর চলতি শীতে একটু বেশিই আর্কষণীয় হয়ে উঠবে পূর্ণিমার চাঁদ। কারণ, আগামী তিনটি পূর্ণিমাতেই চাঁদ থাকবে পৃথিবীর কাছাকাছি।

পূর্ণিমার চাঁদকে এর ফলে একটু বেশি বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে বলে জানাচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। প্রথমটি দেখা গেছে রোববার (৩ ডিসেম্বর)। একে ‘সুপারমুন’ আখ্যা দিয়ে এন্তার হইচই হয়েছে বিশ্বব্যাপী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ভেসে গেছে মানুষের সঙ্গে চাঁদের মিতালীর নান্দনিক কথামালায়। বিজ্ঞানীরাও অবাক।   বলছেন, পরপর তিনটি পূর্ণিমায় এমন নজির খুব কমই আছে। তাদের উৎসাহী চোখও রাতের আকাশের দিকে।

গত রোববারের (৩ ডিসেম্বর) পূর্ণিমায় আকাশ-প্লাবিত ‘সুপারমুন’ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানিরা পেয়েছেন বিচিত্র সব তথ্য। জানিয়েছেন, উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পাক খেতে খেতে পৃথিবীর খুবই কাছাকাছি চলে এসেছিল চাঁদ। পজিশন্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার (পিএসি) জানিয়েছে, এবারই শেষ নয়। আগামী ২ জানুয়ারি এবং ৩১ জানুয়ারির পূর্ণিমাতেও পৃথিবীর কাছে থাকবে চাঁদ। ৩১ জানুয়ারি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণও রয়েছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ থেকেই স্পষ্ট দেখা যাবে তা। পিএসি-র অধিকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে বলছেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে দু’টি পূর্ণিমা পড়েছে। তাই ৩১ জানুয়ারির দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে ‘ব্লু মুন’ বলা হবে। ’’

সুপার মুন।  ফাইল ফটো নাগরিক জীবনের ঘেরাটোপে বন্দি মানুষ জীবন কাটাচ্ছে দিগন্ত ও চাঁদ ছাড়াই। নিরন্ন মানুষের ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময় পৃথিবীতে পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হয়েছিল সুকান্ত ভট্টাচার্যের। বিপরীতে প্রেম ও প্রণয়ের চাঁদকে ঘিরে রোমান্সে-রঙিন জগতের ছবিও এঁকেছেন অনেকেই।   আবার এটাও সত্যি যে, জ্যোৎস্নায় ভিজে সে রোমান্স চিরবিরহের বেদনায়ও ভেসে গেছে। চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝে অনন্তকাল থেকেই চলছে প্রেম ও বিরহের খেলা। মানব-মানবী সে খেলায় আনন্দ ও বেদনার দিনরাত্রি পাড়ি দিয়েছে পৃথিবীর বুকে চাঁদের আলোয়।  

সাহিত্য ও স্বপ্নকাতরতার বাইরে চাঁদকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রকমের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়েও চলেছে চিন্তা-ভাবনা। দেখা গেছে,   পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার (অনেকটা ডিমের মতো) কক্ষপথে পাক খায় চাঁদ। পৃথিবীকে এক বার পাক খেতে তার গড়ে সময় লাগে সাড়ে সাতাশ দিন। এই সাড়ে সাতাশ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর কাছে চলে আসে এবং এক বার দূরে চলে যায়। দূরত্বটা যখন সব থেকে কমে যায়, সেটাকে বলে ‘অনুভূ’ অবস্থান। আর তারা যখন একে অপরের থেকে সর্বাধিক দূরে থাকে, সেই অবস্থানকে বলে ‘অপভূ’। চাঁদ কক্ষপথের যে কোনও অবস্থানে থাকাকালীনই পূর্ণিমা হতে পারে। কিন্তু অনূভূ অবস্থানের কাছাকাছি সময়ে পূর্ণিমা ঘটলে  সেটাই হয়ে যায় ‘সুপারমুন’।

মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রতিটি অনুভূ অবস্থানে দূরত্ব সমান হয় না। গত  রোববার (৩ ডিসেম্বর) পূর্ণিমার সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কমে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯৮৭ কিলোমিটার হয়েছিল। আগামী ২ জানুয়ারি তা হবে ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার এবং ৩১ জানুয়ারি পৃথিবীর থেকে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে চাঁদ। দূরত্বের কম-বেশির কারণে বাড়বে বা কমবে চাঁদের ঔজ্জ্বল্য। ছড়াবে আলোর বন্যা।

চাঁদ ও পৃথিবীর এই লুকোচুরির রোমান্সে ‘সুপারমুন’ মানুষ আপ্লূত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘সুপারমুন’ খুবই নতুন শব্দ। ব্যবহার হচ্ছে সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে। আসলে পূর্ণিমা এবং চাঁদের অনুভূ অবস্থানে একাকার হয়ে মিলে গেলেই তৈরি হয় ‘সুপারমুন’। চন্দ্রপ্রেমিকরা জোছনার আলোয় ভেসে হারিয়ে যাওয়ার সময় ভুলে যান একটি নাম। নামটি হলো একজন পশ্চিমা জ্যোতিষীর, রিচার্ড নোল্লে, যিনি ‘সুপারমুন’ শব্দটির জনক।

আজ রাতে আকাশে ভাসবে সুপারমুন

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।