ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

ভাঙন আতঙ্কে বউ-পোলাপান নিয়া কষ্টে আছি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
ভাঙন আতঙ্কে বউ-পোলাপান নিয়া কষ্টে আছি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন-ছবি-বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: ‘এক বছরে মধ্যে তিন তিন বার ঘর-বাড়ি টান দিছে। নিজের কোনো জমি-জিরাত নাই, এহন যামু কই। খেদাইমারী ও বলদমারা গ্রামে হাজার তিনেক পরিবার আছিলাম, সবারই ঘর ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে ভাইংগ্যা গ্যাছে।’

নদী আমাগো পাছ ছাড়ে না, বসতবাড়ি সব নদীতে গেইলেও ভাঙনের আতঙ্ক আমগো পাছ ছাড়ে না। বউ-পোলাপান নিয়া খুব কষ্টের মধ্যে আছি।

এহন অন্যের জমিত কোনোমতে আশ্রয় নিয়্যা আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে আমাগো একটাই দাবি, আমরা রিলিপ চাইন্যা, নদী বাঁইনধ্যা দিলে নিজের জমিতে যেন ঘর তুইল্যা থাকতে পারি।

এভাবেই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কথাগুলো বলছিলেন- রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রবল ভাঙন কবলিত বলদমারা গ্রামের আলতার হোসেন, সোহরাব আলী, ময়নাল শেখ, রাশেদুল আলম এবং উত্তর ফলুয়ারচর গ্রামের সুভাশ দাশ, জহেরা বেওয়া, তুলসি রাণীসহ অনেকে।

প্রতিবছর ভাঙনের মুখে ব্রহ্মপুত্র নদের গর্ভে গ্রামের পর গ্রামের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাব-দাদার ভিটে-মাটি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন রাস্তার দু’পাশে, হেলিপ্যাডে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ঝুপড়ি তুলে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারগুলো।

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সর্বশান্ত পরিবার-ছবি-বাংলানিউজব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তা না হলে অদূর ভবিষতে রৌমারী উপজেলা পরিষদ ভবনসহ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

আষাঢ়-শ্রাবনের বর্ষা মৌসুমের আগেই ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ করালগ্রাসি ভাঙনের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে রৌমারী উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষজন।

ভাঙনের কবলে পড়া গ্রামগুলো হচ্ছে- ইটালুকান্দা, সাহেবের আলগা, চর গেন্দার আগলা, চরঘুঘুমারী, ঘুঘুমারী, খেরুয়ারচর, পূর্বখেরুয়ারচর, পূর্ব খেদাইমারী, উত্তর খেদাইমারী, পশ্চিম পাখিউড়া, পাখিউড়া,পশ্চিম বাগুয়ারচর, বাগুয়ারচর, বাইসপাড়া, বলদমারা, পূর্ব বলদমারা, ধনারচর, ধনারচর নতুন গ্রাম, দিগলাপাড়া, তিনতেলী।

রৌমারী উপজেলার স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা সিএসডি’র নির্বাহী পরিচালক আবু হানিফ মাস্টার বাংলানিউজকে বলেন, গত পাঁচ বছরে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার নদীভাঙনের কবলে পড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। এই সব পরিবারের একটি বড় অংশ ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন শহরের বস্তিতে বসবাস করছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে সর্বশান্ত পরিবার-ছবি-বাংলানিউজতিনি আরও জানান, উদ্বাস্তু পরিবারগুলো পুর্নবাসন ও নদীভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নিলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফাউজুল কবির বাংলানিউজকে জানান, বর্ষা মৌসুমের আসার আগেই চরশৌলমারী, বন্দবেড় ও যাদুরচর ইউনিয়নের ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে কার্যকর ভূমিকা নিতে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বাংলানিউজকে জানান, নদীভাঙন রোধে সরকারের প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, এভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন অব্যাহত থাকলে, অদ‍ূর ভবিষৎতে মহান মুক্তিযুদ্ধের মুক্তঞ্চল হিসেবে পরিচিত রৌমারী উপজেলা বাংলাদেশের মানচিত্র হতে বিলীন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
ওএইচ/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।