ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

গল্প

পিঁয়াজু | মাহফুজুল আলম খান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
পিঁয়াজু | মাহফুজুল আলম খান পিঁয়াজু | মাহফুজুল আলম খান

তিনতলা বাসা থেকে নামার সময় যতোবারই শেষ ধাপটিতে পা দেয় একটা জিনিসের কথা মনে পড়ে যায় সোলেমানের। হরলিক্সের বৈয়াম।

নিজের অজান্তেই সে অতি সন্তর্পণে পা ফেলে শেষ ধাপটি অতিক্রম করে। তার মনে হয় এই মাত্র হরলিক্সের বৈয়ামটি বাজারের থলে ছিঁড়ে পড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো।

কানের মধ্যে কাঁচের বৈয়াম ভাঙার শব্দটিও যেনো শুনতে পায় সোলেমান। শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে একবার উপরের দিকেও তাকায় সে। কেউ তাকে দেখছে কিনা! এই নির্জনে কেউ তার এমন ইতস্তত আচরণ দেখলে সাক্ষাৎ পাগল ভেবে বসবে, তাতে সন্দেহ নেই।

মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেদিন। বাজার থেকে আসছিল সোলেমান। এক থলে বাজার। একদম উপরে ছিলো হরলিক্সের বৈয়ামটি। বাসায় পৌঁছানোর এক কিলোমিটার আগেই রিকশা থেকে নেমে যায় সে। দশ টাকা বাঁচানোর জন্য রিকশা ভাড়া করেছে অতোটুক পর্যন্তই। এই এক কিলোমিটার সে সন্তর্পণে হাঁটল। আজকাল বাজারের প্লাস্টিক থলেগুলোর হাতলটা একদম নাজুক। বাজার করে বাসায় আসতে আসতে ছিঁড়ে যায়। এদের কারিগররা এভাবেই এগুলো বানায়, যেনো তাদের ব্যবসা চালু থাকে। এই কারিগররা বাংলাদেশের না হয়ে জাপানি হলে একটা থলে দিয়ে কমপক্ষে কয়েক বছর বাজার করা যেত।

বাসায় আসা পর্যন্ত ছেঁড়া ছেঁড়া অবস্থার থলেটা খুব সাবধানে আলতো করে ধরে হাঁটছিল সোলেমান। বাসার গোড়ায় পৌঁছে সিঁড়ি ধরল। যেই মাত্র একধাপ পার হয়ে দ্বিতীয় ধাপে পা দিলো সে, অমনি বাজারের থলেটি জবাব দিয়ে দিলো। হাতলটি ছিঁড়ে সিঁড়িতেই পড়ে গেলো। হরলিক্সের বৈয়ামটি ঝনাৎ করে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো। কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল সোলেমান। এই মর্মান্তিক ঘটনাটিতে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির একটা গুন্ডামি রয়েছে।

এক কিলোমিটার থলেটি ছেঁড়েনি। সে মনে করেছিল, সিঁড়িটা পার হলেই বাসায় পৌঁছে যাবে কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে ওঠা এবং সমান্তরাল রাস্তায় চলা এক নয়।  

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় মাধ্যাকর্ষণের অতিরিক্ত টানাটানি সহ্য করেনি হাতলটি। এর ফলে ঘটনাটি ঘটে

একটা হরলিক্সের বৈয়াম তেমন বড় কিছু না। কিন্তু সীমিত আয়ের সংসারে কখনও-সখনও বিলাসদ্রব্য হিসেবে বিবেচনা করে পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য যার বয়স চার বছরের মতো এবং খুব আদরের, তার জন্য সপ্তাহখানেক চিন্তাভাবনা করে বাজারের লিস্টে যখন একটি হরলিক্সের বৈয়াম রাখা হয় তখন এটাকে আর ছোট করে দেখা যায় না।

আর ঘটনাটি যখন ঘটে একজন গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করা বেকার ছেলের হাতে, যে পটাপট আরেকটি হরলিক্সের বৈয়াম কিনে আনার সামর্থ্য রাখে না, যে কিনা কয়েকটি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও কোনো কূল-কিনারা করতে না পেরে বড় ভাইয়ের ঘাড়ের উপর অনবরত লোকমা ধরেই যাচ্ছে, তখন আর এটাকে ছোট ঘটনা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই।

লজ্জা, দুঃখ এই দু’টোর মর্মার্থ, চার বছরের একটা ছোট্ট মেয়ের বোঝার কথা নয়।
বুঝলে অন্তত সে সোলেমানের চেহারা দেখার পর চাওমিন চাওমিন বলে কাঁদতো না।
হরলিক্সকে সে বলে চাওমিন। ছোট বাচ্চারা একেক জিনিসের একেক নাম দেয়। নামগুলোও অদ্ভুত।

বাচ্চাটির অনেক প্রতীক্ষার, পছন্দের জিনিসটি সোলেমান তার নিজের হাতে নষ্ট করল— এটা মনে করে সোলেমান তার সামনে অনেক ছোট হয়ে গেলো।

তাকে কোলে নিয়ে আদর করে নির্জনে গিয়ে চুপি চুপি বলল, "ইনান, তোমার জন্য আমি কিছুদিন পর অনেকগুলো চাওমিন নিয়ে আসব”।

ইনান তাদের পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। সোলেমানের বড়ভাইয়ের মেয়ে। তার মুখে হাসির আভা দেখে বুঝা গেলো, সোলেমানের কথায় সে আশ্বস্ত হয়েছে।

টাকাপয়সা ছাড়া পুরুষ মানুষের চলে না। যেভাবে হোক একটা চাকরি ধরে ফেলতে হবে। মাস্টার্স শেষ করে কোমর বেঁধে চাকরির বাজারে নেমে দেশের বাছা বাছা চাকরি দেখে ইন্টারভিউ দেবে— সে সময় সোলেমানের নেই। অফিস সহকারী, কেরানি এই জাতীয় একটা ছোটখাটো চাকরি পেলেই হয়ে যায়।

আজকাল চাকরির বাজারের অবস্থা কেমন খারাপ তা বুঝেছে সেদিন আয়কর অফিসের অফিস সহকারী পদের জন্য একটা ভাইভা দিতে গিয়ে। এর আগে রিটেনও দিয়েছিল।
মাত্র এইট পাশ চেয়েছে এরা। সারাদেশে অনেক লোক নেবে। ভাইভা দিতে গিয়ে দেখে বেশির ভাগ প্রার্থীই ভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করা! 

অবাক ব্যাপার! ভেবেছিল সে-ই একমাত্র গোবর গণেশ যে কিনা অনার্স শেষ করে একটি এইট পাশ চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছে! ভার্সিটির ঘাগু ঘাগু সাবজেক্ট থেকে অনার্স মাস্টার্স করা পোলাপান, প্যান্ট-শার্ট, চেহারা ছুরতে বেসরকারি ব্যাংকের শিক্ষানবিশ অফিসারদের মতো। একদম ফিটফাট। দেখতেও সুন্দর।

সোলেমানের চেহারা-ছুরত দেখতে তেমন সুবিধেরও না, তাই সুন্দর স্মার্ট ছেলেদের দেখলে কেমন যেনো ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকে। তাদের চুল, প্যান্ট-শার্টের নিপুণতা খুব সাবধানে চোখ ফেলে দেখে নেয়। কেউ খেয়াল করলে বিশ্রী ব্যাপার। এতোগুলো যোগ্য ছেলে দেখে ভেতরে ভেতরে তার হতাশা আরও বেড়ে যায়। ভাবল, এতো ছোট চাকরিটাও বুঝি হবে না তার।

তার আগে পাঁচজন থাকতেই বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডের শব্দটা বেড়ে যায় তার। স্বাভাবিক থাকার জন্য মনকে যা যা বোঝানোর সব বোঝাল সে। কে শোনে কার কথা।  

তার পালা যখন আসে বুকের ভেতর ঢিব ঢিব শব্দটা আরও বেড়ে যায়। সেদিকে তোয়াক্কা না করে ঢোকে ভাইভা বোর্ডে।

যতোটুকু নিজেকে বিনয়ী রাখা যায় রেখে সোলেমান বলে, আসতে পারি স্যার?
-আসুন।
সোলেমান চেয়ারের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
আগে থেকে তার জানা আছে, তারা বসতে না বললে বসা যাবে না।
চারজন মানুষ বসে আছেন সামনে, সবাই দেখছে তাকে।
একজন বললেন, বসুন।
চেয়ারটাতে বসল সোলেমান।
তার মুখটা যার সামনাসামনি তিনি বললেন, আপনার নাম কী?
-সোলেমান আহমেদ।
-এখন কী করছেন?পড়ালেখায় আছেন?
-না স্যার। এসএসসি'র পরে আর পড়তে পারিনি। সেই থেকে কয়েকটি টিউশনি করি।

শুরুতে সে একটা মিথ্যা বলল কারণ, এর আগের একটা ছোট চাকরির ভাইভাতে সত্য বলায় তারা সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, "ঠিক আছে আপনি আসুন”।
-আচ্ছা, টিউশন বানান করেন।
সে টিউশন বানান করল।
বাম পাশেরজন জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বাসায় কে কে আছেন?
-মা আর বড় ভাইয়ের পরিবার। আমি তাদের সঙ্গে থাকি।
আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন, বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী?
-ঢাকা।
-পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃংগের নাম কী?
-হিমালয়ের এভারেস্ট।

সোলেমান তার রিটেন পরীক্ষার খাতাটা দেখল তাদের সামনে। একজন বলল, এই খাতাটি কি আপনার?
সোলেমান খাতার দিকে চোখ রেখে বলল, জ্বি, আমার।
সে দেখল খাতার লেখাগুলো খুব সুন্দর গোছানো। ভাবল, হয়তো তাদের মনে ধরেছে।
সব শেষে তারা হাসিমুখে বললেন, আপনি এবার আসুন।
সোলেমান আচরণে সর্বোচ্চ বিনয়ীর ভাব রেখে সালাম দিয়ে বিদায় নিলো।

ভাবল, সুন্দর করে রিটেন দিলো, ভাইভাও ভালো হলো, তাহলে চাকরিটা হয়তো হয়ে যাবে। কিন্তু কোথায়! সে চাকরিটাও হলো না তার।

ভাগ্যিস একদল ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট দেখেছিল সেখানে নইলে এইট পাশের এই চাকরিটা না হওয়ার জন্য নিজের যোগ্যতাকে তিরস্কার করা থেকে সে কোনোভাবে রেহাই পেত না।

কিছুদিন পর আরেকটা ভাইভা দিলো সোলেমান। মাত্র এসএসসি পাশ চেয়েছে তারা।
সারাদেশে ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর নিয়োগ। অনেক লোক নেবে। প্রতি ইউনিয়ন থেকে দুইজন করে। এই দুইজন থেকে একজন যদি সোলেমান হয়ে যায় তাহলে কাহিনী শেষ। চাকরিটা হয়ে গেলে এর উপরে দাঁড়ানো যাবে। বড় চাকরি না হয় পরেই দেখা যাবে। আগে পকেটের অসহায়ত্ব ঘুঁচুক। মাস ঘুরলেই বেতন আসবে। কম হোক তবুও সেটা দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যাবে। যেকোনো সময় পকেটে হাত দিলেই কিছু না কিছু তো থাকবেই। টাকাশূন্য পকেট, এক অসহ্য জিনিস!

সোলেমান ভাবে, মা'র জন্য একটা নতুন পানের বাটা কিনতে হবে। পানের মজুদটার দিকেও নজর দিতে হবে। একটা পানকে কতো টুকরা করে খায় তার মা। মাকে বলবে যেনো আর টুকরা না করে। তার মায়ের আরেকটা শখ আছে, নতুন টাকা গোনা। কড়কড়ে নতুন টাকা গুনতে নাকি ভালো লাগে।

একদিন মা তাকে বলেছিল, "তোরা টাকা রোজগার করলে আমাকে কিছু নতুন টাকা দিস, আমি গুনবো”।

প্রতিমাসে নিউমার্কেটের মোড় থেকে কিছু নতুন টাকা ভাঙিয়ে নেবে সোলেমান। তার মা নতুন টাকা গুনবে। গুনে গুনে একটা ব্যাগের মধ্যে জমিয়ে রাখবে। দু'দিন পর পর বের করে আবার গুনবে।

সে হয়তো দুষ্টুমি করে বলবে, "গোনাতে ভুল হয়েছে মা, এখানে 'এতো' টাকা”।
মা'র চোখে-মুখে সন্দেহ লেগে যাবে।
আবার পূর্ণ মনযোগে সবগুলো টাকাই গুনবে।
পরে বিজয়ীর হাসি হেসে বলবে, "বলেছিলাম না, এখানে 'এতো' টাকা”!
এটা শুনে খুব হাসি পাবে সোলেমানের। তবে তার হাসিটা হবে পরাজিতের হাসির মতো।
মা'কে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে তার সঙ্গে দুষ্টুমি করেছে সোলেমান। মা বুঝলে, নিজেকে বোকা ভেবে লজ্জা পাবেন।
না। তার মা বোকা না। চালাক মেয়ে।
শিশুর মতো চালাক!
মা'কে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল সোলেমান, খাবারের মধ্যে কোন জিনিসটা বেশি পছন্দ?
কোনোকিছু চিন্তা ভাবনা না করেই মা বলেছিলেন, "পিঁয়াজু”।
সোলেমান অবাক হয়। বিরক্তও হয়।
পিঁয়াজু কি একটা পছন্দের জিনিস হয়!
হাটে-বাজারে, অলি-গলিতে, যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় জিনিসটা।
পাঁচ টাকা দিলেও পায়। দুই টাকা দিলেও পায়।
একটা সিরিয়াস কথা জিজ্ঞেস করল সে। মা উত্তর দিলেন, পিঁয়াজু।
সে ভেবেছিল, মা নিশ্চয় কোনো দামী জিনিসের নাম টাম বলবে, পয়সা কড়ি কামানো শুরু করলে তখন মা'র পছন্দের জিনিসটা ঘন ঘন নিয়ে আসবে। কিন্তু পিঁয়াজুর কথা বলে মা মুডটাই নষ্ট করে দিলো সোলেমানের।
সোলেমান আবার তাকায় মা'র মুখের দিকে। ভাবলেশহীন মায়াময় মুখচ্ছবি।
জিজ্ঞেস করে আবার, সত্যিই কি পিঁয়াজু?
মা বললেন, হ্যাঁ, পিঁয়াজু। ছোট ছোট কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে পিঁয়াজু।  
মনে মনে হাসে সোলেমান। পিঁয়াজু জিনিসটার জন্য চাকরি-বাকরির দরকার নাই। চাইলেই সেটা সে প্রায় সময় আনতে পারে।
 
ভাইভাটা হয়ে গেলো।
ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো সোলেমানের।  
যখন বোর্ডে ঢোকে সেসময় তারা নিজেদের মধ্যে কী যেনো বলাবলি করে মুখ টিপে টিপে হাসছিল। সে একটু ইতস্তত বোধ করল। তারা কি তাকে দেখে হাসছিল! না। তাকে দেখে হাসবে কেন?
তার আগের প্রার্থীর কথাবার্তা নিয়েও হাসতে পারে। তাদের হাসি-কান্না নিয়ে ভেবে কাজ নেই সোলেমানের।  
প্রশ্নোত্তর পর্বে ছিলো ফাইভ-সিক্সের ছেলে-মেয়েদের জানা থাকে এরকম কিছু প্রশ্ন। সবগুলোর সদুত্তর দিলো সে।
শেষে তাকে বলা হলো, আসুন।
সোলেমান বের হয়ে গেলো।

যারা ভাইভা দিতে এসেছে তাদের মধ্যে অনেকেই বলাবলি করছে, চাকরি নাকি যাদের হওয়ার তারা আগেই সিলেক্টেড হয়ে গেছে। ভাইভা-টাইভা এগুলো নাকি সব লোক দেখানো, ইত্যাদি ইতাদি শুনে মুখটা কাঁচুমাচু হয়ে গেলো সোলেমানের। ভাবল, এই চাকরিটাও তা হলে হবে না।

বিষণ্ন মনে সোলেমান রাস্তায় এসে দাঁড়ায় বাসের জন্য। মেঘে মেঘে আকাশটাও যেনো বিষণ্ন হয়ে আছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস। যাত্রী ছাউনির একপাশে পিঁয়াজু বানাচ্ছে এক দোকানি। গরম গরম পিঁয়াজুর গন্ধটা নাকে এসে লাগছে। সোলেমান কাছে গিয়ে দেখল ছোট ছোট কুড়মুড়ে পিঁয়াজু। মা'র কথা মনে পড়ে তার।

মা'র পছন্দের অত্যন্ত সস্তা জিনিসটা দেখে মন খারাপের ভেতরও হাসি পাচ্ছে তার। পকেটে হাত দিলো সে। একটা পাঁচ টাকার নোট বের হলো। পাঁচ টাকাই থাকার কথা। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একটা দশ টাকার নোটই ছিলো পকেটে। বাস ভাড়া পাঁচ টাকা। দশ থেকে পাঁচ গেলে আর পাঁচ টাকা থাকবে। সোজা অংক। ওয়ান টু'র ছেলেমেয়েও পারবে এরকম একটা সোজা অংক। তবুও আবার সে হাত দিলো। যদি ভুলে কোনো পকেটে কিছু থেকে যায়! দুই তিন পকেট ঘুরে শূন্য হাতই ফিরে এলো তার।
পাঁচ টাকার নোটটা উল্টে পাল্টে দেখল।
হ্যাঁ। পাঁচ টাকাই। একদিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি, অন্যদিকে একটা মসজিদের ছবি। কুসুম্বা মসজিদ, নওগাঁ।

দোকানির কাছে গিয়ে সে পিঁয়াজু নিলো পাঁচ টাকার। গরম গরম কুড়মুড়ে পিঁয়াজু। তারপর হাঁটা শুরু করল সে বাসার দিকে। হাঁটবে, ঘণ্টা দেড় ঘণ্টার পথ। দ্রুত পা চালাতে হবে।

ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃষ্টি নামতে পারে। লোকজন দ্রুত যে যার গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটে আজকাল গাড়ির জন্য হাঁটা যায় না। তবুও তাকে হাঁটতে হবে। গাড়ির দিকে চোখ তুলে চেয়ে নষ্ট করার মতো সময় তার হাতে নেই।

পিঁয়াজুর পুঁটলিটা বুকের কাছাকাছি ধরে সে দ্রুত হেঁটে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।