ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

শিশু ক্যানসারে চাই সতর্কতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
 শিশু ক্যানসারে চাই সতর্কতা বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস ১৫ ফেব্রুয়ারি

ক্যানসার সৃষ্টি হয় অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন থেকে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় দুইশ প্রকারের বেশি ক্যানসার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যানসারই ভিন্ন এবং এদের চিকিৎসাপদ্ধতিও এক নয়। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিনগত, ভাইরাস, খাবারে বিষজাতীয় পদার্থের উপস্থিতি, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থসহ পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যানসার হয়। তবে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিশু ক্যানসার সংক্রান্ত একটি সংস্থা জানায়, বিশ্বে প্রতিবছর দুই লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের বেঁচে থাকার হার আশি শতাংশ।

যেখানে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র পাঁচ শতাংশ, আক্রান্ত হয় সিংহভাগ। আমাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে না পারলে ২০৩০ সালে এ হার ১৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, শিশু ক্যানসার রোগীদেরও রোগ নিরাময় করা যায়। শুরুতেই চিহ্নিত করা গেলে ক্যানসার নিরাময় সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে এ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশু ক্যানসার নিরাময়ে সচেতনতা বাড়ানোরও দরকার রয়েছে। এক্ষেত্রে মিডিয়াসহ সবার সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়ানো দরকার।

কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, প্রতিবছর ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছেই। শিশুদের ব্লাড ক্যানসার বেশি হলেও নসিকাগ্রন্থি, কিডনি ও চোখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়। শনাক্ত করা গেলেও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।

বহুজাতিক বেসরকারি সংস্থা  ‘ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসার’ এর বাংলাদেশের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী রিজওয়ানা হোসাইন বলেন, শিশুদের ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসার লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে তারা কাজ করছে। সঙ্গে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য সক্ষমতা তৈরি করতে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।  

‘ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অনেক উপভোগ্য কার্যকলাপ পরিচালনা করা হয়। যেমন শিল্প ও অঙ্কন প্রতিযোগিতা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসারের সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ক্যানসার  সচেতনতায় প্রচারণা চলছে। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় বাংলাদেশে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চায় সরকার।
 
খুব ক্লান্ত বোধ করা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীরের যে কোনো জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেওয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা, মলত্যাগে পরিবর্তন আসা (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া), জ্বর, রাতে ঠাণ্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া, অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা, অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া, ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া- এসব সাধারণ কিছু লক্ষণ ছাড়াও আছে অনেক জানা-অজানা লক্ষণ। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হয় না। তাই সবাইকে ক্যানসারের বিভিন্ন লক্ষণ, উপসর্গ সম্পর্কে ন্যূনতম সাধারণ জ্ঞান থাকা উচিত। আর সেটা সম্ভব হলে আমাদের চারপাশ বা আপনজনের মধ্যে এমন লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া সম্ভব।  
 
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগির মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদামের মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। যদি হাড়ের ক্যানসারে কোনো শিশু আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা একটু কম থাকে। কারণ হাড়ের ক্যানসার  ছড়িয়ে যায় ‍খুব দ্রুত। তাই শিশুদের ক্যানসার হলে পরিবারকে ভেঙে না পরে দ্রুত তার চিকিৎসা করাতে হবে সঠিক উপায়ে, তাহলেই তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব।  

১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস। পৃথিবীর সব শিশু সুখী হোক, নিরাপদ হোক তার জীবন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।