ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

১৭৫ কমিউনিটি ক্লিনিকে তালা, ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
১৭৫ কমিউনিটি ক্লিনিকে তালা, ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা টানা ১১দিন ধরে লক্ষ্মীপুর জেলার ১৭৫টি ক্লিনিকে তালা। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারা (সিএইচসিপি) আন্দোলন করে আসছে। দাবি আদায়ে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে টানা ১১দিন ধরে লক্ষ্মীপুর জেলার ১৭৫টি ক্লিনিকে তালা ঝুঁলছে। এতে ভেঙে পড়েছে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা।

ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় মেঘনা উপকূলীয় এলাকাসহ চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়েও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। রোগীরা সেবা নিতে এসে তালা বন্ধ দেখে ফেরি যাচ্ছেন।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়ন ঘুরে এমই চিত্র দেখা যায়।
 
লাইজু আক্তার নামে এক গৃহবধূ তার মেয়েকে ঠাণ্ডা ও জ্বরজনিত কারণে কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ‘ছেলামত উল্লাহ হাওদার বাড়ির দরজার কমিউনিটি ক্লিনিকে’ নিয়ে আসেন। কিন্তু ক্লিনিক বন্ধ থাকায় মেয়েকে প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। একই সময় মেঘনা পাড়ের হতদরিদ্র এক রোগী ক্লিনিক বন্ধ দেখে বাড়ি ফিরে যান।

পার্শ্ববর্তী এলাকার ‘সেকান্তর সর্দার বাড়ির দরজার ক্লিনিকে’ গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
টানা ১১দিন ধরে লক্ষ্মীপুর জেলার ১৭৫টি ক্লিনিকে তালা।  ছবি: বাংলানিউজ
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ওই ক্লিনিকে প্রায় দুই শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসে। কিন্তু গত ১১দিন ধরে বন্ধ থাকায় রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছে। এমনই চিত্র জেলার রামগতি, রায়পুর, রামগঞ্জসহ পুরো জেলাজুড়ে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ঠাণ্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরা প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে পারলেও দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা পাওয়ার প্রত্যাশায় করছেন।

লক্ষ্মীপুর উপকূলীয় জেলা। বিশেষ করে জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপকূলীয় ও চারাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর নির্ভর। আন্দোলনে ক্লিনিক বন্ধ থাকায় তারা এখন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।

সিভিল সার্জন অফিস ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রী কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাকরি রাজস্বকরণের দাবিতে গত ২০ জানুয়ারি থেকে জেলার ১৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করছে। ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি জেলার কর্মরত সব সিএইচসিপি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। এরপর থেকে ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোনলন করছেন।

সিএইচসিপি অ্যাসোয়িয়েশনের লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে জানান, একটাই দাবি চাকরি রাজস্বকরণ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।  

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে আমরণ আনশন করবেন বলে জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে আন্দোলন করছেন। রোগীদের বিকল্পভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

গত ১৮ জানুয়ারি সিএইচসিপি অ্যাসোয়িয়েশনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টা কামাল সরকার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটে সংবাদ সম্মেলনে চাকরি রাজস্বকরণের জন্য কর্মবিরতিসহ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।  

প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা ও জেলাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সিএইচসিপিরা। এরপরেও যদি দাবি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাবে সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডাররা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এসআর/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।