ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

পুষ্টিহীন খাবারেই রোগ-মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
পুষ্টিহীন খাবারেই রোগ-মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি ‘গ্লোবাল প্যানেল নীতিমালার সারসংক্ষেপ প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: বায়ু দূষণ, মাদক ও তামাক সেবনে মানুষের রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকি যতোটা, তার চেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে অপুষ্টিকর খাবার গ্রহণে। ধারণা করা হয়, শুধু এ কারণে আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১১ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

সোমবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক ‘গ্লোবাল প্যানেল নীতিমালার সারসংক্ষেপ প্রকাশ’ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ব্র্যাকের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গ্লোবাল প্যানেল।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন,  প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সত্ত্বেও আমরা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছি। স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নয়ন করেছি। শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার কমেছে। খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে অামরা পুষ্টিকর খাদ্য এখনও সবার জন্য নিশ্চিত করতে পারিনি। পুষ্টিকর খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ, সার, কৃষি কাজের অন্যান্য উপাদান কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে।  

‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা সত্ত্বেও দেশে এখনও ২০ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমায় রয়েছে। এখনও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ, অনুর্ধ্ব ২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যৎসামান্যই পাচ্ছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও পুষ্টির বিষয়ে অজ্ঞতা রয়েছে। ’অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।  ছবি: ডিএইচ বাদলএ সমস্যা মোকাবেলায় কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে উন্নত পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিতকরণের সুপারিশ, সাধারণ জনগণের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য তালিকা প্রণয়নের প্রস্তাব ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচারণা চালাতে হবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের পুষ্টি নিশ্চিত হবে।  

কোন কোন খাদ্যে পুষ্টি রয়েছে সে সম্পর্কে বাবা-মাকে সচেতন হতে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন গ্লোবাল প্যানেলের সদস্য এমি সিমন্স, টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর প্যাট্রিক ওয়েব।

সিমন্স বলেন, বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন করেছে। তবে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার সবার জন্য নিশ্চিত হয়নি। এখানে এখনও অপুষ্টির শিকার মানুষ রয়েছে। এসডিজি অর্জনে বিভিন্ন খাতে উন্নতি হয়েছে ঠিক, তবে পুরোপুরি এসডিজি অর্জন করতে জনগণের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করতে হবে।  

তিনি জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পুষ্টি উন্নয়নে নীতি-নির্ধারকদের ৬টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এগুলো হলো- খাদ্যমানের পরিকল্পনা, উন্নত খাদ্যাভাস তৈরি, সুবিধা-বঞ্চিত শিশু, কিশোরী ও নারীদের উন্নত খাদ্যাভাসের ব্যবস্থা, সুবিধা-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর পুষ্টি গ্রহণের পথে বাধাসমূহ চিহ্নিতকরণ, এসডিজি-২ অর্জনে জাতীয় নীতিমালাকে আরও সম্প্রসারিত করা এবং খাদ্যমানের সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া।  

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের ২০১৪ সালের (২০১১-২০১৪) জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ও স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী, এখনও বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৬ শতাংশই খর্বকায়, ১৪ শতাংশ শিশুর উচ্চতার তুলনায় ওজন কম, ৯০ লাখ ২০ হাজার শিশু ভুগছে রক্তশূন্যতায়। এছাড়া ৪০ লাখ ১০ হাজার শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায়। এটা এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক ডা. কাওসার আফসানা, যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) প্রধান জন এডমনসন, জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টিভ ডেভিড ডিলন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এমসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।