ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

সংকটে-অব্যবস্থাপনায় বেহাল গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
সংকটে-অব্যবস্থাপনায় বেহাল গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংকটে-অব্যবস্থাপনায় বেহাল গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-ছবি: বাংলানিউজ

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) থেকে: যন্ত্রপাতি, লোকবল সংকট এবং ডাক্তার-নার্সদের দাম্ভিক আচরণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা গফরগাঁও উপজেলা ও পাশ্ববর্তী দুই থানার প্রায় কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, পর্যাপ্ত ডাক্তারের সংকট এখানে বহুদিনের। এই মূহুর্তে ৮ জন ডাক্তার অন্য যায়গায় কোর্স করছেন।

২ জন করে আছেন ডেপুটেশনে এবং সাধারণ ছুটিতে। যাদের সবাই এখান থেকে বেতন গ্রহণ করেন। ফলে এখানকার পদগুলো শূন্য না থাকায় নতুন ডাক্তার পদায়ন সম্ভব হচ্ছে না। নেই কোনো আবাসিক ডাক্তারও। অনেকদিন ধরে আবাসিক ডাক্তার না থাকার কথা একাধিকবার সিভিল সার্জনকে জানালেও কাজ হয়নি। হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভার মাত্র ১জন! ফলে দুই অ্যাম্বুলেন্স থাকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

অপরদিকে তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী স্বল্পতা ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকটও চরমে। মাত্র দু’জন আয়া, তিনজন ওয়ার্ডবয়, ও তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছেন। কিন্তু তারাও কাজে একেবারেই মনোযোগী নন। ফলে ময়লা ও উৎকট দুর্গন্ধ বিরাজ করছে পুরুষ ও মহিলা দুটি ওয়ার্ডেই। পরিচ্ছন্নতার অভাবে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

সরকারিভাবে হাসপাতালে বিনামূল্যে যেসব ওষুধ সরবরাহ করা হয় তার কিছুই পাচ্ছেন না রোগীরা। নামমাত্র নাপা, গ্যাসের ট্যাবলেট ছাড়া বাদবাকি সবই হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও রোগীদের বাইরে থেকে কিনে আনতে বাধ্য করা হয়।

হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এমনকি আয়াদের বাজে ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। নামমাত্র দু’একটি ওষুধ বাদে সব ঔষধই বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে নিজ খরচে করাতে হয়। সংকটে-অব্যবস্থাপনায় বেহাল গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-ছবি: বাংলানিউজঅভিযোগ রয়েছে, আন্তরিক নন এখানকার ডাক্তাররা। বিশেষত রোগীদেরকে সময় না দেওয়া ও তাদের সাথে অযথা বাজে ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দিনের বেলায় কমবেশি ডাক্তার থাকলেও সন্ধার পর থেকে জরুরি বিভাগে কোনো ডাক্তারের খোঁজ মেলে না বলে অভিযোগ রোগীদের। এখানে  চাকরিরত অধিকাংশ ডাক্তার ঢাকা বা ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনযোগে আসেন। ফলে সকাল এগারোটার আগে হাসপাতালে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না।

হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অবস্থা বেশ ভাল হওয়া স্বত্ত্বেও হাসপাতালের আয়া ও নার্সদেরকে ঘুষ দেয়া না হলে কোনোভাবেই রোগীর ডেলিভারি করানো হয় না এখানে। রয়েছে দালালদের উপদ্রব। রোগীদের অযথা হয়রানি করতে দালালদের প্রত্যক্ষ সহায়তার অভিযোগ রয়েছে এখানকার ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের বাহিরের অংশ বেশ পরিপাটি থাকলেও ময়লা আর দুর্গন্ধে ভরা পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড দুটি। চারপাশে তাকিয়ে বোঝা গেল গত তিন-চার দিনে একবার ধোয়ামোছা হয়নি এর ভেতরটা। দুটি ওয়ার্ডের জন্য রয়েছেন একজনমাত্র নার্স। রোগীদের বসার কোনো জায়গা জন্য নেই কোনো ওয়টিং রুমে। ফলে অনেককেই রোগী নিয়ে হাসপাতালের সম্মুখে গাছতলায় বসে থাকতে দেখা যায়।

নিচ তলার জরুরি বিভাগে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মত। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের রুম ও জরুরি বিভাগ দু’জায়গাতেই তাদের অবাধ যাতায়াত লক্ষ্য করা যায়।   সংকটে-অব্যবস্থাপনায় বেহাল গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-ছবি: বাংলানিউজসালটিয়া ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব করিম শেখ বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত চার দিন ধরে আমি এখানে ভর্তি। কোনো ডাক্তারকে আসতে দেখিনি। এই চার দিনের মধ্যে একবারের জন্যেও কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে পরিষ্কার করতে দেখিনি। জ্বর আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতাল থেকে নাপা ট্যাবলেট ছাড়া আর কিছু দেওয়া হয়নি। বাইরে থেকে ৩০০ টাকা দামের ইনজেকশন কিনে পুশ করিয়েছি।    

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলম আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এখানে আসা রোগীদের ভাল সেবাদানের জন্য। আমাদের এখানে লোকবলের অভাব রয়েছে। যা রোগীদের প্রাপ্য সেবা দিতে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করছে। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর লোকবল কম থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ কিছুটা খারাপ। তবে সার্বিকভাবে সব ভালোভাবেই চলছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।