ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

নানা সমস্যায় জর্জরিত সৈয়দপুরের ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
নানা সমস্যায় জর্জরিত সৈয়দপুরের ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নানা সমস্যায় জর্জরিত সৈয়দপুরের ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল। ১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি হাসপাতালটি গড়ে ওঠে।

হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাপান সরকারের অর্থায়নে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছে ৭০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালটি ম‍ূলত ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগীদের জন্য।

এরপর অপারেশন থিয়েটার, প্যাথলজি বিভাগ ও ১০টি বেড নিয়ে ২০০২ সালে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকার সাভারে অনুরূপ একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। এরফলে হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় একটি কমিটি। এই কমিটির মাধ্যমে হাসপাতালটি ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির মাধ্যেমে পরিচালিত হয়।

বর্তমানে হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে হাসপাতালে ফাইলেরিয়া ও ক্রিমির ওষুধ সরবরাহ করা হলেও অন্যান্য ওষুধের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। আর্থিক সঙ্কটের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় ফাইলেয়িরা রোগির পাশাপাশি সাধারণ রোগিদের চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আউটডোরে রোগী ও একটি অ্যাম্বুলেন্সের উপার্জিত আয়ে হাসপাতালটি কোনোরকম চলছে।

উত্তর জনপদের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া জেলায় এ রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যেখানে শতকরা ২০ ভাগ লোক এই রোগের জীবানু বহন করছেন। এছাড়া নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ ৩২টি জেলা ফাইলেরিয়া অধ্যূষিত জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ফাইলেরিয়া বা গোদ একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষ করে নারীরা এ রোগের কারণে সমাজে নানাভাবে হচ্ছে উপেক্ষিত।

নানা সমস্যায় জর্জরিত সৈয়দপুরের ফাইলেরিয়া হাসপাতাল

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন ধরনের ফাইলেরিয়াল প্যারাসাইট বা পরজীবী শরীরে প্রবেশ করলে এ রোগের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের পরজীবী একজন রোগী হতে আরেকজন সুস্থ্য লোকের শরীরে কয়েক প্রজাতির মশার কামড়ে সংক্রামিত হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো হল তীব্র এবং ঘন ঘন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর যা এমনিতেই সেরে যায়।

আক্রান্ত লসিকা গ্রন্থি’র প্রদাহের কারণে লসিকা গ্রন্থিতে ব্যাথা, লাল হয়ে যাওয়া এবং লসিকা নালী ফুলে যাওয়া। গোদ হলে সাধারণত শরীরের হাত-পা বা পুরুষের অণ্ডকোষ, নারীর স্তন ও যৌনাঙ্গ অর্থাৎ সম্ভাব্য অক্রান্ত স্থানগুলো (হাতির পায়ের মত) অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রংপুরের স্টেশন এলাকার নওশাদের মেয়ে আছিয়া খাতুন (১৪) বাংলানিউজকে জানায়, ফাইলেরিয়ার কারণে সে চলাফেরা করতে পারছিল না। তার এক দূর সম্পর্কের মামার পরামর্শে সে হাসপাতালে ১১ দিন আগে ভর্তি হয়। কয়েক দিনের চিকিৎসায় সে এখন নিজেই চলাফেরা করতে পারে।

আরেক রোগী রংপুরের বদরগঞ্জের ইউছুব আলীর স্ত্রী আছিয়া খাতুন (৫৫) বাংলানিউজকে জানান, তিনদিন আগে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ বোধ করছেন।

হাসপাতাল কমিটির অন্যতম সদস্য ও তত্বাবধায় ডা. সুরত আলী বাংলানিউজকে জানান, অপুষ্টি, দারিদ্রতা, সামাজিক অবস্থান, কুসংস্কার, অশিক্ষা, বসতবাড়ির নোংরা পরিবেশ, ঘন বসতিসহ নানা কারণে ফাইলেরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগীরা আস্তে আস্তে পঙ্গু হয়ে যায়। ফলে তারা সমাজ ও পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ রোগের চিকিৎসা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রায়হান তারেক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন আউটডোরে ৩৫/৪০ জন রোগী আসেন। শীতকালে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগিরা একটু আরামে থাকলেও গরমে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া ও ঘা পাঁচড়া নিয়ে হাসপাতালে আসেন। ফাইলেরিয়ার পর্যাপ্ত ওষুধ সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়ায় সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।  

তিনি আরও জানান, সরকারের উদ্যোগে হাসপাতালটিতে সাধারণ চিকিৎসাসেবা চালু করা হলে এই জনপদের মানুষ উপকৃত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।