ঢাকা: তুলির বয়স ২২ বছর। টানা দুই বছর ধরে সে মানসিক অবসাদে ভুগেছে।
অবস্থা বেগতিক দেখে তুলির পরিবার তাকে ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার তুলির অবস্থা বুঝে বেশ কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। এর মধ্যে ছিলো মিরটাজাপাইনও। নির্দিষ্টকালীন ওষুধ সেবনের পর তুলি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু এক পর্যায়ে ফের ছন্দপতন ঘটে। আবার ঘুমে সমস্যা ও অস্থিরতা দেখা দেয়।
এবার সে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই মিরটাজাপাইন খেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ওষুধটির ওপর। মনে হয়, এটা না খেলে সে ঘুমাতে পারবে না। এভাবে টানা চারবছর সে কোনোরকম বিশেষজ্ঞের মত ছাড়াই ওষুধটি নেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তার দৈহিক মানসিক স্বতঃস্ফূর্ততা ফের বাধাপ্রপ্ত হয়, সে আরও বিষাদে ডুবে যেতে থাকে। কিন্তু এর কারণ কী? প্রতিটি ওষুধের যেমন নিরাময়ক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তেমনি রয়েছে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
মিরটাজাপাইন কী?
মিরটাজাপাইন এক প্রকার এন্টিডিপ্রেসন্ট ড্রাগ। মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার ট্রিটমেন্টে ডাক্তাররা এটি ব্যবহার করেন। ওষুধটির জেনেটিক নাম মিরটাজাপাইন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডনামে এটি বাজারে পাওয়া যায়।
মিরটাজাপাইন সেবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
• ট্রিপটোফেন ও মিরটাজাপাইন একসঙ্গে খাওয়া যাবে না।
• মিরটাজাপাইন চলাকালীন সময়ে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। অবস্থার কতটুকু উন্নতি হচ্ছে তা পরিষ্কার হওয়ার জন্য।
• ওষুধটি চলাকালীন সময়ে যদি কোনো বিশেষ লক্ষণ যেমন- আচরণের পরিবর্তন, অ্যাংজাইটি, প্যানিক অ্যাটাক, ঘুমে সমস্যা, আবেগপ্রবণতা, খিটখিটে মেজাজ, উত্তেজিত হয়ে যাওয়া, আরও বিষণ্ন অনুভব করা, আত্মহত্যা বা নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে পরিবারের উচিত অবশ্যই ডাক্তারকে জানানো।
• ওষুধটি ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য নয়। এটি শিশুদের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
• ডিপ্রেশন কাটিয়ে তুলতে মিরটাজাপাইন কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়। ডাক্তার যেভাবে প্রেসক্রাইব করেন, ঠিক সেভাবেই ওষুধটি সেবন করতে হবে। যদি চার সপ্তাহের মধ্যে অবস্থার কোনো উন্নতি দেখা না যায় তবে অবশ্যই তা বিশেষজ্ঞকে জানাতে হবে।
• মিরটাজাপাইন চিন্তা ও প্রতিক্রিয়ার ক্ষতি করতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অতিরিক্ত মিরটাজাপাইল খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
• চিন্তাধারার পরিবর্তন, কম ঘুম, ঝুঁকিপ্রবণ আচরণ, চরম সুখ বা দুঃখের অনুভূতি, বেশি কথা বলার প্রবণতা।
• ঝাপসা দৃষ্টি, চোখ ব্যথা, চারদিকে আলোর বিন্দু দেখতে পাওয়া।
• অনুভূতি হ্রাস।
• ওজন বৃদ্ধি, দুর্বলতা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা বোধ।
• হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাওয়া, হ্যালুসিনেশন, বমিভাব, হাত-পা অসাড় হয়ে আসা।
• তন্দ্রা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা।
• মুখ শুকিয়ে আসা, কোষ্ঠকাঠিন্য।
এসব সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর অবশ্যই মিরটাজাপাইন ডোজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই সেবন করতে হবে।
সুস্থ থাকুন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৬
এসএমএন/এএ