ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

জেনে নিন গণমাধ্যমকর্মীর মনো-দৈহিক ঝুঁকি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬
জেনে নিন গণমাধ্যমকর্মীর মনো-দৈহিক ঝুঁকি

ঢাকা: আশির দশকের গোড়ার দিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে ফের‍ত ব্যক্তিদের মধ্যে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি-বিপর্যয় পরবর্তী মানসিক চাপজনিত রোগ) প্রথম শনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আগে সামরিক ভূমিকায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা ‘শেল শক’ বা ‘ব্যাটল ফ্যাটিগ’ নামে এক মানসিক বিপর্যয়জনিত অবস্থায় ভুগতো বলে মনে করা হতো।

পরবর্তী সময়ে গবেষণায় দেখা যায়, যারা বড় ধরনের ট্রমার (তীব্র মানসিক চাপ) মধ্যে দিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যেও একই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ হতে থাকে। বড় ধরনের ট্রমা বলতে ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, ভয়াবহ দুর্ঘটনা ইত্যাদির কথা বলা যায়।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, যেসব মানুষ নিজে ট্রমার শিকার নয়, কিন্তু ট্রমার শিকার ব্যক্তিদের পাশে বা তাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন তারাও পিটিএসডিতে ভুক্ত পারেন। এই পাশে থাকা বা সংযুক্ত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে জরুরি সেবাদাতা উদ্ধারকর্মী, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সকর্মী, অ্যাম্বুলেন্স কর্মী, নার্স, চিকিৎসক, সাংবাদিকের কথা উল্লেখ করা যায়। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য, এমন কি যিনি ট্রমার শিকার এবং পরে বেঁচে ফিরে এসেছেন তিনি নিজেও পিটিএসডিতে ভুগতে পারেন।   দীর্ঘদিন মারাত্মক রোগে ভুগে সুস্থ হয়ে উঠেছেন (ক্যান্সার রোগী) এমন ব্যক্তিও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

বিশেষত, সংবাদকর্মীরা ট্রমাটিক ইভেন্টের দর্শক এবং তাতে সক্রিয়ভাবে ঘটনাস্থলে বা ডেস্কে ভূমিকা পালন করেন বলে তাদের মানসিক রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো থেকে যায়। তারাও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

যুদ্ধক্ষেত্র অবশ্যই সবচেয়ে বিপদজনক এলাকা। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সংবাদকর্মীরা যুদ্ধের সমতুল্য পরিস্থিতিতেও ট্রমার শিকার হতে পারেন। যুদ্ধ সমতুল্য পরিস্থিতি হিসেবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য বিপদজনক, একইসঙ্গে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে মনে করা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের গবেষকদের মতে, ‘মনুষ্য সৃষ্ট ট্রমা বেশি মারাত্মক। এই ট্রমা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলে। কারণ, সম্ভবত মনুষ্য সৃষ্ট ট্রমা মানুষের পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান ও সংহতির জায়গাটা নষ্ট করে ফেলে। যেসব ক্ষেত্রে সহিংসতার সঙ্গে নারী বা শিশু জড়িত, সেগুলোও ভয়াবহ প্রভাব ফেলে সমাজে।

ট্রমার সাধারণ মানে ক্ষত। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে ক্ষত তৈরির কারণ থাকলে তার বৈরী প্রভাব মানুষের মনেই তো পড়বেই!

এই দুষ্ট ক্ষতের কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি, ভবিষ্যতের প্রকোপ ইত্যাদি বিশ্লেষণ সাংবাদিকদের কাজ। ফলে যেকোনো গণমাধ্যমকর্মীরই মনো-দৈহিক ঝুঁকিতে থাকাটা স্বাভাবিক।

গণমাধ্যমকর্মীরা স্ট্রেসে আক্রান্ত হতে পারেন। কারও কারও মধ্যে তাদের পেশাগত জীবনেও পিটিএসডি’র লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। যদিও অধিকাংশ সময় নিজেই নিজের খেয়াল রাখতে হবে। তথাপি পরিবার ও অফিসের মানসিক সহযোগিতা নিয়েও সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবেন।

এরপরও অল্পসংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী পিটিএসডি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। যদি আক্রান্ত হয়েই যান, তবে তাদের সুচিকিৎসার প্রয়োজন হবে। আশার বিষয় পিটিএসডি থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৬
এটি/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।