ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

ঢাকার শিশুরাই বেশি মানসিক সমস্যায়

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
ঢাকার শিশুরাই বেশি মানসিক সমস্যায়

ঢাকা: বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিশুদের মানসিক সমস্যা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। আর ঢাকার শিশুরাই সবচেয়ে বেশি মানসিক সমস্যায় রয়েছে।


হালনাগাদ কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ৫০ ভাগ শিশুই কোনো কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এ বাস্তবতা বদলাতে দেশের আর্থ-সামজিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন স্থায়ী সমাধান হলেও সরকাকে এখনই অস্থায়ী সমাধানের কথা ভাবতে হবে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকেও এ অবস্থার পরিবর্তনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিশুসহ সব মানুষের মানসিক সমস্যা সমাধানে দেশব্যাপী মনোসামাজিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২০০৬ সালের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই মন্ত্রণালয় জাতীয় মনোসামাজিক কাউন্সেলিং নীতিমালা-২০১৬ এর খসড়া চূড়ান্ত করছে।

মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের জাতীয় মানিসক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার যৌথ উদ্যোগে মানিসক সমস্যা সম্পর্কিত এক জাতীয় পর্যায়ের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ নানাবিধ মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর ঢাকা বিভাগে শিশুদের মোট ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানসিক সমস্যায় রয়েছে।

এই সমস্যার পেছেন শৈশবকালীন বিলম্বিত বিকাশ, অপুষ্টি, যথাযথভাবে প্রতিপালনের অভাব, নিরক্ষরতা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, দারিদ্র, বেকারত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অপ্রাপ্তি, অসহনীয় মানসিক চাপ, মানসিক হয়রানি ও যৌন হয়রানি, সহিংসতা, যৌতুকের চাপ,পরকীয়া ও দাম্পত্যকোলহসহ নানা কারণ রয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা খুব বেশি প্রচলিত নয়। তাই সারাদেশেই মনোসামাজিক কাউন্সেলিং পরিচালিত হবে। উপজেলা পর্যায়েও মানুষকে সচেতন করা হবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য। মানুষের মনোভাব ও আচরণের ইতবাচক পরিবর্তনে মনোসামাজিক কাউন্সেলিংয়ের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যোগ করেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষেশজ্ঞ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে শিশুদের উপর মানসিক চাপ বাড়ছে। রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগে সারা দেশের চেয়ে এই চাপ বেশি। দেশের ৫০ শতাংশ শিশু কোনো না মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আর মানসিক চাপে রয়েছে ৯০ শতাংশেরও বেশি শিশু।
মন্ত্রণালয়ের কাউন্সেলিং নীতিমালার খসড়ায় আরো বলা হয়, আর্থ-সামাজিক কারণে একদিকে যেমন মানসিক সমস্যা তৈরি করছে, তেমনি নানাবিধ সামাজিক ও শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি করছে। বর্তমানে মানুষের ডায়াবেটিকস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, হাপানি, মাইগ্রেন ইত্যাদি লেগে থাকে। আর এসবের সাথে রয়েছে মানসিক অসুস্থতার সম্পর্ক। একজন ব্যক্তি যখন মানসিক চাপে থাকে তখন তার শারীরিক সমস্যা বৃদ্ধি পায়। আবার দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় থাকলে মানিসকভাবে যেমন ভেঙ্গে পড়েন, তেমিন তার পরিবারও মানসিক অশান্তিতে ভেঙ্গে পড়ে।   ফলে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, আবেগ নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতাসহ নানাবিধ মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সামাজিক সমস্যা যেমন যৌন হয়রানি, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় বিদ্যমান। নির্যাতনের ফলে অনেক সম্ভবনাময় নারী ও শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক সমস্যার নিবিঢ় সম্পর্ক। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আত্মহত্যাকারীদের শতকরা ৯০ ভাগের কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা ছিল। আত্মহত্যার জন্য বেশি দায়ী মানসিক রোগ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিষন্নতার হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, এই সেন্টারে আসা ২৫ থেকে ৩০ বছরের বিবাহিত নারীর সমস্যা বেশি অবিবাহিতদের চেয়ে।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
এসএমএ/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।