যদি আপনার নিজের মনে হয় যে কোনো একটা বিষয়ে আপনি অনেক জানেন, তাহলে নিজের সেই জানার ওপরই বিশ্বাস রাখা উচিত, তাই না? তবে নতুন গবেষণা বলছে সম্পূর্ণ ভিন্নকথা : যারা নিজেকে বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, তারা প্রায়ই ‘অত্যুক্তির ফাঁদে’ পড়েন। এধরনের মানুষ অনেক জানেন বলে দাবি করলেও তারা অতটা জানেন না।
নানা কারণে একজন মানুষ স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞ বনে যেতে পারেন। বিশেষ করে অন্য কারো মতামত নিজের ইচ্ছে মতো প্রভাবিত করতে অনেকে এই অত্যুক্তি করেন। নিজেকে আরো একটু স্মার্ট ও বুদ্ধিমান দেখাতেও অনেকে ‘অনেক জানার ভান’ ধরেন। আবার অনেকে এটা ইচ্ছে করে করেন না। নিজের জানার ওপর অতিরিক্ত আস্থার কারণেও কারো কারো ক্ষেত্রে এমনটা হয়।
কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত একটি গবেষণায় গবেষকরা বিভিন্ন মানুষের নিজেদের জানার ব্যাপারে অত্যুক্তি করার ব্যাপারটি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। ‘আপনি নিজেকে কতটা জ্ঞানী বলে মনে করেন?’—পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে আলাদা কয়েকটি টপিকে নিজেদের জ্ঞানের ওপর নম্বর দিতে বলা হয়। তারপর বিভিন্ন টপিকের পনেরটি আলাদা টার্ম সম্পর্কে তারা কতটুকু জানেন, তার ওপর তাদের নম্বর দিতে বলা হয়। এই পনেরটি টার্মের মধ্যে তিনটি ছিল ফেইক। দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা নির্দিষ্ট কোনো টপিক সম্পর্কে বেশি জানে বলে দাবি করেছিলেন, তারা প্রায় সবাই সেই টপিকের ফেইক টার্মগুলো সম্পর্কে জানেন বলেও দাবি করেছেন।
তৃতীয় আরেকটা পরীক্ষায় আরো কিছু অংশগ্রহণকারী যোগ দেয়। অর্ধেক সংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে ফেইক টার্ম আছে বলে সতর্ক করা হয়। আগে থেকে সতর্ক করায় জ্ঞান জাহির করার প্রবণতা কিছুটা কমে। তবে ‘বেশি জানি’ বলে মনে করা আর না জানা টার্ম সম্পর্কে ধারণা আছে এমন দাবি করার মাঝে সম্পর্কটা আগের মতোই ছিল।
ফাইনাল এক্সপেরিমেন্টে অংশগ্রহণকারীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রথম গ্রুপকে কঠিন একটি জিওগ্রাফি কুইজ আর দ্বিতীয় গ্রুপকে সহজ একটি জিওগ্রাফি কুইজ সমাধান করতে দেয়া হয়। তৃতীয় গ্রুপকে কোনো কুইজই দেয়া হয় নি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা সহজ কুইজের সমাধান করেছিলেন, তারা অন্য গ্রুপের চেয়ে নিজেদের জিওগ্রাফি জ্ঞান বেশি বলে দাবি করেন। একইসাথে তারা ফেইক টার্মগুলো সম্পর্কে জানেন বলেও দাবি করেন। অন্যান্য গ্রুপের তুলনায় তারা নিজেদের জানার ওপর সবচেয়ে বেশি নম্বর দিয়েছেন।
আপনি যদি মনে করেন কোনো একটা ব্যাপারে আপনি অনেক বেশি জানেন, তাহলে সেটা আরেকবার ভেবে দেখুন। কোনো একটা বিষয়ে আপনি নিজে যতটা জানেন ভাবছেন, আসলেই ততটা জানেন কিনা সেটা খতিয়ে না দেখলে মিথ্যা জ্ঞানের বড়াই করার ফাঁদে পড়তে হতে পারে আপনাকেও। গবেষকদের মতে, যেসব মানুষ তাদের সত্যিকার জ্ঞানের চেয়ে নিজেদের আরো জ্ঞানী বলে বিশ্বাস করেন, তাদের কোনো কিছু জানার ও শেখার আগ্রহ কমে যায়। তারা আগে থেকেই অনেক জানার আত্মতৃপ্তিতে ডুবে থাকেন। নিজেদের ধারণাই নেই এমন সব ব্যাপারে তারা অন্যকে উপদেশ দিতে শুরু করেন।
পাঠক, পরেরবার কোনো স্বঘোষিত মহাজ্ঞানী আপনাকে কোনো ব্যাপারে উপদেশ দিতে এলে, সেটা মাথায় নেয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখুন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৬
টিকে/
** ফেসবুকে সাইকোলজিক্যাল রিসার্চ পাওয়া গেল যেসব তথ্য
** মানসিক রোগের সাথে ক্রিয়েটিভ কাজকর্মের সম্পর্ক আছে?
** সুখি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ১০ নিয়ম
** লজ্জা পাওয়া ভালো, তবে কতটা পাবেন?