ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মনোকথা

লজ্জা পাওয়া ভালো, তবে কতটা পাবেন?

ফারাহ্‌ মাহমুদ, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
লজ্জা পাওয়া ভালো, তবে কতটা পাবেন?

‘কী সমস্যা তোমার?’, ‘তুমি কি কোনো কিছুই ঠিকঠাকভাবে করতে পারো না?’, ‘তুমি কখনোই সফল হতে পারবে না। ’—এধরনের কথা কি আপনাকে প্রায়ই শুনতে হয়? আর, শুনতে শুনতে আপনারও কি মনে হয়, আসলেই আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না?

ঘৃণা ছড়ানো এসব সমালোচনা মানুষের মনকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে।

মনকে ভরে তুলতে পারে লজ্জায়। আর এমন একজন মানুষ যদি ছোটবেলা থেকেই শিখে থাকেন, অনুভূতি প্রকাশ করার জিনিস না, অনুভূতি নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে হয় কারণ হৃদয়ের গোপনতম অনুভূতির প্রকাশ বেশ লজ্জার ব্যাপার—তাহলে তো কথাই নেই।

লজ্জার অনুভূতি নিয়ে মনোবিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত খুব বেশি গবেষণামূলক কাজ হয় নি। তবে এধরনের বিষাক্ত লজ্জা যে মানুষের আত্মসম্মানবোধ, অন্য মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি এবং সৃজনশীল কাজের অন্তরায়—তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।

সমাজ বিজ্ঞানী থমাস স্কেফ লজ্জাকে ‘মাস্টার ইমোশন’ বলে দাবি করেছেন। মাস্টার ইমোশন বলার কারণ হচ্ছে লজ্জা এমন এক আবেগ যা অন্যান্য আবেগের স্বাভাবিক প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ অনুভূতিপ্রবণ প্রাণী। লজ্জা এইসব অনুভূতিকে লুকিয়ে ফেলে আত্মঘৃণার কালো চাদরে।

অন্য লোকে কী বলবে অথবা কোনো একটি কাজ করলে অন্য লোকে হাসবে কিনা এই চিন্তায় তটস্থ থাকতে হয় মানুষকে। লজ্জা পাওয়ার ভয় এমন এক ভয় যা স্বীকার করাটাও মানুষের জন্যে বেশ লজ্জার।

দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রে লজ্জার শারীরিক প্রকাশকে ‘শিরদাঁড়া দিয়ে হঠাৎ প্রবাহিত বিব্রতকর ঠান্ডা স্রোত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এধরনের লজ্জা মানুষের আত্মমর্যাদা বোধের জন্যে ক্ষতিকারক, একারণে এমনকি ডিপ্রেশনেরও স্বীকার হয় মানুষ।

লজ্জায় পড়ার ভয়ে অনেক মানুষই সবসময় এমন কাজ করতে চান, যেসব কাজ করলে অন্যে ভালো বলবে এবং তার প্রশংসা করবে। অন্যের ভালোবাসা পাবার জন্যে করা কাজগুলো কোনো মানুষের পারসোনালিটির অংশ হয়ে উঠতে থাকলে, সেই মানুষটা নিজেই একসময় পরিণত হয় এক মিথ্যে মানুষে (False Self)।

অন্যের মনোযোগ ও ভালোবাসা পাবার জন্যে অন্য কেউ হয়ে ওঠা মানুষ ভেতরে ভেতরে চরম আত্মমর্যাদাহীনতায় ভুগতে থাকে। এই ধরনের মানুষ একসময় নিজেই ভুলে যায়, তার আসল রূপ কী ছিল। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ ভাবতে ভাবতে নিজের স্বরূপ ভুলতে থাকা মানুষকে এভাবেই গুনতে হয় ভুলের মাসুল।

তাহলে ধ্বংসাত্বক এই লজ্জার অনুভূতির হাত থেকে মুক্তির উপায় কী? নিজের অনুভূতি প্রকাশের সময় আপনি কি ভাবতে বসেন অন্য লোকে কী ভাববে? আপনার ভেতরের সমালোচক মানুষটা কি সকল কাজে আপনার বাধা হয়ে দাঁড়ায়?

এ থেকে বাঁচতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে নিজের লজ্জা নিয়ে লজ্জা না পাওয়া। মানুষের মধ্যে লজ্জার অনুভূতি থাকবেই। কিন্তু অন্য লোকে কী বলবে বা অন্য লোকের দ্বারা অপমানের শিকার হওয়ার ভয়ে কুঁকড়ে থাকলে কোনো কাজই ঠিকঠাক করা যাবে না।

লজ্জা থাকার ইতিবাচক দিকও আছে বৈকি! এন্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিজওর্ডার আছে—শুধু এমন মানুষই কখনো লজ্জা পান না। অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে নিজের কাজ ভেবে দেখার দরকার আছে, তবে এ ভাবনায় বন্দি হয়ে থাকলে চলবে না।

আপনি যদি আপনার অহেতুক লজ্জা পাওয়ার ব্যাপারটি চিহ্নিত করতে পারেন, তবে এবার থেকে জীবন কাটাতে পারবেন সাহস ও স্বাধীনতায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এফএম/টিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad