ঢাকা: চিকিৎসকের কাছে কিছু গোপন করবেন না। তিনি আপনার প্রয়োজনীয় শারীরিক ও রক্ত পরীক্ষা করে বলে দেবেন এর কারণ।
চিকিৎসক ও আপনি
চিকিৎসককে সব কিছু বলুন। হতে পারে যা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না, সেটাই চিকিৎসকের কাছে একটি জরুরি তথ্য। আপনার অতীত ও বর্তমানের সব রোগের কথা বলুন। শৈশবের কোনো রোগ যেমন: মাম্প্স, আপনার আজকের এ অবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে।
• যে সব ওষুধ যা ইদানীং খেয়েছেন তা জানান। আপনার এ সমস্যা কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে হতে পারে।
• পারিবারিক বা আন্তঃসর্ম্পকের সমস্যা যেমন যৌন সমস্যা বা খিট খিটে মেজাজ ইত্যাদির কথা চিকিৎসককে বলুন।
• জীবনে কোনো বড় পরিবর্তন এসে থাকলে তার কথা জানান। যেমন-ডিভোর্স, বিয়ে ইত্যাদি।
• দাদা/দাদির বা নানা/নানির পরিবারের কোনো সদস্যের জেনেটিক সমস্যা থাকলে তা জানান।
• মানসিক সমস্যায় ভুগলে তা খুলে বলুন।
• শারীরিক পরীক্ষা: লজ্জা পাবেন না। আপনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন পেশাজীবীর সাহায্য নিচ্ছেন- ভয়ের কিছু নেই।
• চিকিৎসকে আপনার দেহে লোম ও চুলের পরিমাণ দেখতে দিন।
• স্তন, প্রোস্টেট পরীক্ষায় সহয়তা করুন।
• শুক্রাশয়ের আকার এবং স্থিতিস্থাপকতা দেখতে দিন।
• অণ্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা দেখতে দিন।
• দৃষ্টিশক্তির ভিজ্যুয়াল ফিল্ড টেস্ট করান।
• দেহের পেশী ও চর্বির পরিমাণ দেখতে দিন।
• অন্যান্য যা যা চিকিৎসক চান সেভাবে তাকে আপনার দেহ পরীক্ষা সহায়তা করুন।
চিকিৎসা না করালে যা হবে
সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা না নিলে বন্ধ্যাত্ব, হৃদরোগের ঝুঁকি ও হাড়ের ক্ষয় হতে পারে। সেই সঙ্গে লক্ষণসমূহের স্থায়ীত্ব তো বোনাস পাওনা। স্বাভাবিক টেসটোসটেরন যুক্ত পুরুষের তুলনায় কম টেসটোসটেরন যুক্ত পুরুষ ৩৩ শতাংশ বেশি মৃত্যু ঝুঁকির সম্মুখীন হন।
কম টেসটোসটেরনজনিত যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া, যৌন দুর্বলতা ও মানসিক পরিবর্তনগুলো ধরা পড়তেই বেশ দেরি হয়ে যায়। বেশির ভাগ মানুষ এগুলোকে রোগের লক্ষণ বলে প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারেন না। যা পরবর্তীতে তাদের পেশীর পরিমাণ হ্রাস, হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে সার্বিক দৈহিক শক্তিমত্তায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে কেউ যদি ৪৫ বছরে বয়সে তার ২৫ বছর বয়সের দৈহিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য টেসটোসটেরন বাড়াতে চান, তা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে রক্তে টেসটোসটেরন বাড়াবার ওষুধ প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করা বিপদজনক।
রক্তে কম টেসটোসটেরন, ঠিক কতটা কম?
সমাজে এমন বহু পুরুষ আছেন যারা জানেন না তাদের রক্তে টেসটোসটেরন মাত্রা কম। এমনিতেই বৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের টেসটোসটেরন মাত্রা কমতে থাকে। ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে ৩০ শতাংশ পুরুষের রক্তে ২৫০ ন্যানোগ্রাম/ডেসিলিটারের কম টেসটোসটেরন পাওয়া গেছে এক গবেষণায়। কম টেসটোসটেরন বলাতে তাই এর উপরের সীমা আছে ৩০০ ন্যানোগ্রাম/ডেসিলিটার। কিন্তু নিচের কোনো সীমা নেই।
রক্তে টেসটোসটেরন কমলে যা করবেন
উপরের লক্ষণগুলো দেখে যদি সন্দেহ করেন আপনার টেসটোসটেরন কম থাকতে পারে তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি কারণ খুঁজে দেখবেন। কারণটির চিকিৎসা আগে শুরু করবেন। যেমন, যদি ডায়াবেটিসের জন্য টেসটোসটেরন কমে গিয়ে থাকে, তবে প্রথমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসাকে গুরুত্ব দেবেন। কাজেই চিকিৎসককে রক্তে টেসটোসটেরন বাড়ানোর ওষধের জন্য পীড়াপিড়ি করবেন না।
টেসটোসটেরন স্বল্পতার চিকিৎসার নীতিমালা প্রথমেই টেসটোসটেরন বাড়ানোর ওষুধ দেওয়া বিরোধী। আপনি চটকদার বিজ্ঞাপন বা বিভিন্ন হারবাল ওষুধের কথা প্রচার মাধ্যমে দেখতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, এসব সহজলভ্য ওষুধের গুণগত মানের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যেকোনো ওষুধ সেবনকারীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আপনার মূল্যবান যৌন জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেবেন না।
প্রফেসর ডা. সানজিদা শাহরিয়া
কাউন্সিলর
বিসিআর পেইন অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৫
এটি/এএ
** পুরুষের ক্লান্তি-অবসন্নতা-বিষণ্নতার কারণ