ঢাকা: মনোকথা আপনাদের পাতা। আপনার মনস্তাত্ত্বিক নানা সমস্যা সমাধানে আমরা রয়েছি আপনার পাশে।
আপনার সমস্যা
আমার ছেলের বয়স ৬ বছর ৪ মাস। ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সে কারো কথা শুনতে চায় না। পড়লে মনে রাখতে পারে কিন্তু পড়ার জন্য বসাতে পারি না। কার্টুন, গেমস ইত্যাদি পছন্দ করে। ঘুম কম। সর্বদা ব্যস্ত থাকে। শান্ত করা কষ্টকর। মাঝে মাঝে রেগে গেলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কোনো ডাক্তার দেখানো হয়নি। এ অবস্থায় করণীয় কি জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।
আমাদের সমাধান
এতোটুকু শুনে সঠিক উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে আপনার লেখাতেও কিছু বিষয় স্পষ্ট। যেমন আপনি লিখেছেন ‘পড়লে মনে রাখতে পারে’। অর্থাৎ, একটা বিষয় পরিষ্কার, তার বুদ্ধি বিষয়ক কোনো সমস্যা নেই। শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা নেই, সেটাও ধরে নিলাম।
অন্য যে সমস্যাগুলো আপনি উল্লেখ করেছেন- কথা শুনতে চায় না, পড়াতে বসাতে পারেন না, কার্টুন-গেমস পছন্দ করে। ঘুম কম, ব্যস্ত, শান্ত করা কষ্টকর। রেগে যায়, নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
এডিএইচডি বা এটেন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি নামে একটা রোগ আছে। এ রোগের লক্ষণ হলো, আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো কিছুতে বা কোনো জায়গায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে, অতিরিক্ত চঞ্চল হয়, ঘুমও কম হতে পরে।
যেহেতু আপনার সন্তান কার্টুন দেখে এবং গেমস পছন্দ করে, সেক্ষেত্রে এডিএইচডি-এ আক্রান্ত তাও বলা যাবে না এবং না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
যা থাকলো তা আচরণগত সমস্যা। হ্যাঁ, এ সমস্যায় আপনার বা বাড়ির অন্যদের অনেক কিছু করার আছে। আর একটু বেশি করে বললে, এ ধরনের আচরণগত সমস্যার কারণও কিন্তু অন্যরা। যতটা ছেলেটি নিজে দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী যারা তাকে দেখাশোনা করেন বা পরিচর্যা করেন।
যেকোনো মানুষ যখন কোনো অগ্রহণযোগ্য কাজ করে পার পেয়ে যায়, তখন সে কাজটি আরও বাড়তে থাকে। আপনার ছেলের ক্ষেত্রেও এ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি। না পড়ে, সে মজা পেয়ে গেছে এবং বিষয়টি সে আপনাদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে।
আপনি যা করতে পারেন
• আপনার সন্তানের, সব ধরনের অগ্রহণযোগ্য কাজগুলোর একটি তালিকা করুন।
• একটা একটা করে সেসব থেকে সরানোর চেষ্টা করুন।
• যতই রাগ করুক, যখন যে কাজটি তার কাছ থেকে আশা করছেন সেটি করতে অনুপ্রাণিত করুন।
• যেকোনো ভালো বা আশানুরূপ কাজ করলে তার প্রশংসা করুন।
• কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওর রাগ না দেখার চেষ্টা করুন।
• তবে শারীরিক নির্যাতন করবেন না।
আমি জানি না, আপনি কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারলেন কিনা। যদি সমস্যা হয়, তবে কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি দেখা করুন। এ ধরনের আচরণ শিখতে যেমন ওর সময় লেগেছে, একইভাবে এসব বাদ দিতেও কিন্তু সময় লাগবে। বিষয়টি পরিবারের সবাইকে বুঝতে হবে, আপনার সমস্যার সমাধান আশা করছি।
প্রিয় পাঠক, ‘মনোকথা’ আপনাদের পাতা। আপনারা জানাতে পারেন বাংলানিউজের ‘মনোকথা’ পাতায় আপনি কি ধরনের প্রতিবেদন দেখতে চান। মনোরোগ নিয়ে যে কোনো মতামত ও আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন আমাদের।
আমরা পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের জবাব জানিয়ে দেবো। আপনি চাইলে গোপন রাখা হবে আপনার নাম-পরিচয় এমনি কি ঠিকানাও।
সমস্যার কথা জানানোর সঙ্গে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ, আপনার নাম, বয়স, কোথায় থাকেন, পারিবারিক কাঠামো এবং এজন্য কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন কি না এ বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের জানান। শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই সমস্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জানানো সম্ভব হবে।
এছাড়া মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বা এ বিষয়ে বিশেষ যে কোনো লেখা যে কেউ পাঠিয়ে দিতে পারেন আমাদের।
আপনার সমস্যা, মতামত বা পরামর্শ ও লেখা পাঠানোর জন্য আমাদের ইমেইল করুন- [email protected]
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
এটি/এএ