ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মনোকথা

মানসিক রোগটির নাম জেনে নিন

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৩

ধরুন, আপনার পরিচিত একজন হাসপাতালে ভর্তি হলো,  স্বাভাবিকভাবেই আপনি জানতে চাইলেন-কী হয়েছে? কেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন? তিনি হয়ত উত্তর দিলেন-‘আমার অসুখ হয়েছিল, তাই’।

শুধু এটুকু উত্তর শুনে আপনি সন্তুষ্ট হবেন? নাকি আরো কিছু জানার প্রয়োজন বোধ করবেন?
যেমন- কী রোগ হয়েছে বা কোথায় রোগ হয়েছে? রোগটার নাম কি? চিকিৎসা কেমন হতে পারে? এমন নানা ধরনের প্রশ্ন।

আর এসব প্রশ্ন মনে আসাটা কি স্বাভাবিক নয়?

খুবই স্বাভাবিক। আমরা যে কেউ এসব কথা জানতে চাই। কিন্তু মানসিক রোগের ক্ষেত্রে কি এমনটা ঘটে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘মানসিক সমস্যা বা রোগ’ শব্দটি শোনার পর আমরা আর কিছুই জানতে চাই না। আমরা ভাবি আর কিছু জানার নেই!

বাস্তুবে শারীরিক বিভিন্ন অসুখের মত মানসিক রোগও অনেক ধরনের হতে পারে। এবং প্রত্যেকটি রোগের লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। সে সঙ্গে রোগগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতি, সেবা, পরিচর্যা এবং সুস্থ থাকার নিয়মকানুনও আলাদা।

পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও ভিন্ন মানসিক রোগের ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণপ্রথা থাকতে পারে।

এমন অনেক রোগী আমাদের কাছে আসেন যারা অনেক দিন ধরে কোন একটি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এবং চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু কী রোগে ভুগছেন সে রোগের নামটিও তারা জানেন না।

অনেক সময় রোগীর স্বজনদের মধ্যেও কেউ রোগটির বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। শুধু ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন আর ডাক্তার যা বলছেন সেটি করে যাচ্ছেন। কেন করছেন সেটিও ভালো করে জানেন না।

শারীরিক রোগের ক্ষেত্রেও এমন চিত্র আমাদের দেশে কম নয়। তবুও মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য যেন অতিসাধারণ।

আমরা বেশির ভাগ মানুষই মনে করি ‘মানসিক রোগ’র বিষয়ে আবার জানার কি আছে! তারপর একধরনের বিশ্বাসের উপর ভর করে আমরা চলতে থাকি।

ক্ষেত্র বিশেষে অনেক সময় সে রোগীর সাথে আচরণও করা হয় প্রথাগত বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। কখনো রুঢ়, কখনোবা বিদ্রুপ মেশানো। এতে রোগী বা রোগীর স্বজনদের মধ্যেও দেখা দেয় আরেক ধরনের প্রবনতা। অর্থাৎ রোগটিকে চেপে রাখার ইচ্ছা। ফলস্বরূপ ক্রমেই বেড়ে চলে সমস্যা।

মানসিক রোগ বা সমস্যা সম্বন্ধে একেবারে কেউ কিছু জানেন না সেটা বলা যাবে না। তবে এর সংখ্যা অতি নগণ্য। একে সচেতনতার অভাব হিসাবে ধরে নেওয়া যায়।

যদি রোগটি সম্বন্ধে জানা থাকে তবে সুবিধা হলো, রোগী কখন কি ধরনের আচরণ করছে, কেন করছে, কি বলছে, কেন বলছে এসবের স্পষ্ট একটা ব্যাখ্যা নিজের কাছে থাকে। অন্যথায় রোগীকে ভুল বোঝার সম্ভাবনাও থাকে প্রচুর। চিকিৎসাও ব্যহত হয়।

তাই যার মানসিক রোগ আছে তার স্বজনদের উচিৎ রোগটি সম্পর্কে ডাক্তারের কাছ থেকে ভালো করে জেনে নেওয়া। জেনে নেওয়া ভাল রোগটির  নাম কী? রেগাটির ধরন কেমন? অর্থাৎ কখন বাড়তে পারে বা কমতে পারে। রোগটির বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য থাকলে সে সম্পর্কেও জানতে হবে।

বর্তমানে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করে আরো ভালো করে বিষয়টি সম্পর্কে জানার  সুযোগও প্রসারিত হয়েছে। যদি রোগের নাম জানা থাকে তবে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করে এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য, অন্যান্য শারীরিক রোগের মত এর এমন কোনো ডাক্তারি পরীক্ষা নেই যা দিয়ে তাৎক্ষণিক বলে দেওয়া যাবে যে আপনার বা আপনার আত্মীয়ের এ মানসিক রোগটি হয়েছে।

মানসিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রোগীর আচরণ বা বিশ্বাসের উপর অনেকক্ষানি নির্ভর করতে হয়।

অনেক ক্ষেত্রে রোগীর আচরণ, বিশ্বাস বা লক্ষণ দেখে রোগ নির্নয় করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। আশপাশের আত্মীয়ের পর্যবেক্ষণও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়। এমনকি শুধু রোগ নির্ণয়ের জন্যও রোগীকে ভর্তি করতে হতে পারে।

তবে যখনই হোক অবশ্যই নামটি জেনে নিতে হবে। কেননা নামের সঙ্গেই  জড়িয়ে থাকে রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা, ভালো থাকা বা খারাপ থাকার সমস্ত উপকরণ।

মনে রাখতে হবে রোগীর প্রতি অন্যদের আচরণও অনেকংশে নির্ভর করবে এর উপর।

ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর ও জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।