ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মনজুর প্রচারণায় নেই শাহাদাত, ছাত্রদলও অনুপস্থিত

মো. মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
মনজুর প্রচারণায় নেই শাহাদাত, ছাত্রদলও অনুপস্থিত এম মনজুর আলম ও ডা. শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম: দলীয় নির্দেশনার পরও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলমের পক্ষে প্রচারণায় নামেন নি নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।

আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে গত ৭ এপ্রিল।

যদিও মনজুর আলম আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ এপ্রিল থেকে প্রচারণায় নেমেছেন। তবে গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

এদিকে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করার জন্য বিএনপির হাই কমান্ড থেকে দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামে নগর ছাত্রদলের নেতারা প্রচারণায় অংশ নেননি।

মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে মনজুর আলমের কোন নির্বাচনী সভায় নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুসহ অন্যান্য নেতাদের দেখা যায়নি। তবে ছাত্রদলে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।

ডা. শাহাদাত বলছেন, একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তাই তিনি প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। জামিন পেলেই মাঠে নামবেন। একই কথা বলছেন, তার অনুসারী ছাত্রদল নেতারা।

অবশ্য তাদের এ যুক্তি মানতে নারাজ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে দলের অনেক নেতা-কর্মী মনজুর পক্ষে কাজ করছেন। অন্যদিকে শাহাদাত হোসেন ঘরোয়া সভায়ও যোগ দেননি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত ২৫ মার্চ মনজুর আলমকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়। পরদিন নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসভবনে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রাম বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

বৈঠক শেষে মনজুর আলমকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। ওইদিন মনজুর আলম তার বক্তব্যে বলেন, শাহাদাত সাহেব নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত যে কোন একজনকে নির্বাচন করতে হবে।

দলের পক্ষ থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই আমি আশা করবো সব ভুলে শাহাদাত সাহেব দলের পক্ষে কাজ করবেন।

দলের নির্দেশ থাকলেও নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর ২০দিন পরও মনজুর পক্ষে কোন সভা-সমাবেশ অথবা ঘরোয়া বৈঠকে যোগ দেননি নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত নগর ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১০জন নেতা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তবে বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত নগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম রাশেদ খান নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে ডা. শাহাদাত বাংলানিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। জামিন নেওয়ার চেষ্টা করেও পাচ্ছি না। তাই বের হতে পারছি না।

নগর বিএনপি, যুবদল-ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ফলে কেউ কাজ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।

নগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলেন শাহাদাত। নগর বিএনপির নেতা হওয়ার পরও দলের মনোনয়ন না পাওায়ায় ক্ষোভ থেকেই মনজুর পক্ষে কাজ করছেন না।

তাদের যুক্তি, মামলা নিয়েও নগরীর একাধিক নেতা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এ পর্যন্ত তাদের কোন সমস্যা হয়নি।

অবশ্য মনজুর আলমকে মনোনয়ন দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে শাহাদাত বলেছিলেন, দল গণতন্ত্র মানলে ৪১ ওয়ার্ড ও ১১ থানার নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্ধারণ করবে।

‘জোর করে গায়েবি আওয়াজ তুলে প্রার্থী ঘোষণা করলেই কর্মীরা মেনে নেবেন না। নগরীর ৪১ ওয়ার্ড ও ১১ থানার নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। ’

নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মামলার জামিন নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গাড়িতে রয়েছেন জানিয়ে বলেন, জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছি। গাড়ি থেকে নেমে আপনাকে ফোন দেব। এরপর বেশ কয়েকবার তার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ডা. শাহাদাত হোসেন ও নগর ছাত্রদলের ১০ নেতা মাঠে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলেও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের শীর্ষ দুই নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাতে নেতা-কর্মীরা বসে থাকেননি।

অন্যদিকে একটি পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নগর যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। কমিটিতে অযোগ্য নেতাদের স্থান দিয়ে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এতে নগর বিএনপির সভাপতিসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতৃত্ব যাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল তারা আন্দোলন সংগ্রামে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। অন্যদিকে পদ বঞ্চিতরা দলের কঠিন সময়ে মাঠে ছিল। এতে দলের কাছে ডা. শাহাদাতের ভুল সিদ্ধান্তে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ফলে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তার নাম উঠলেও সিনিয়র নেতারা সমর্থন দেননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
এমইউ/টিসি/আইএসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ

welcome-ad