ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

জাদুঘরে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০
জাদুঘরে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা

চারু ও কারুশিল্পে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের বিস্তারে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কারুশিল্প তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

এ সময় দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের পুনরুজ্জীবন ও প্রসারের প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই তাগিদ থেকেই ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ। এই প্রয়াসের নেপথ্যে ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসানসহ ১১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সময়োপযোগী উদ্যোগ ও কর্মতৎপরতা।

সূচনালগ্ন থেকে বেশ কিছু ধারাবাহিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কারুশিল্প পরিষদ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদান করেছে সম্মাননা ও প্রচলন করেছে প্রতি দু বছর অন্তর শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার। এ পর্যন্ত ২৬টি মাধ্যমে মোট ৪৭জন কারুশিল্পীকে সম্মানিত করা হয়েছে।

এ বছর কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রথমবারের মতো যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা প্রবর্তন করেছে। এখন থেকে প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের পুরস্কার কারুশিল্পের ৪টি ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠ শিল্পীকে প্রদান করা হবে।

১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় জাদুঘর প্রধান মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ১৪১৭ প্রদান করা হয় এবং একই সাথে উদ্বোধন করা হয় ৫ দিনব্যাপী কারুমেলার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি রুবী গজনবী, জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের নির্বাহী পরিষদ সদস্য শিল্পী চন্দ্রশেখর সাহা, বেঙ্গল গ্যালারির পরিচালক সুবীর চৌধুরী এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।

পুরস্কারপ্রাপ্ত কারুশিল্পীরা হচ্ছেন বাদ্যযন্ত্রশিল্পে [বাঁশি] কমল চন্দ্র সরকার, সুচিশিল্প চিকনকারিতে শিল্পীরাণী বিশ্বাস, চামড়াজাতশিল্পে রতন চন্দ্র দাস ও বয়ন-নকশায় কার্ত্তিক বসাক।

৬৪ বছর বয়সী কমল চন্দ্র সরকারের জন্ম ঝিনাইদহের শৈলকুপার কুমিরদাহ গ্রামে। তার শিল্পনৈপুণ্যে প্রকৃতির বাঁশ হয়ে উঠেছে শিল্পিত বাঁশরি। তার তৈরি সবচেয়ে ছোট বাঁশিটির দৈর্ঘ ৯ ইঞ্চি আর বড়টি ৩৬ ইঞ্চি।

গৃহবধূ শিল্পীরাণী বিশ্বাস সংসার সামলে সময় বের করে তবেই ডুব মারেন শিল্পের ভুবনে। নারায়ণগঞ্জের গোপালদির নগর খানপুরে বসবাসকারী এ শিল্পী মায়ের কাছ থেকেই শিখেছিলেন তার সুচিশিল্প। বর্তমানে তৈরি করে চলেছেন আকর্ষণীয় সব সামগ্রী।

জুতো তৈরি হচ্ছে রতন চন্দ্র দাসের পারিবারিক পেশা। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নবম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। ৫৪ বছর বয়সী এ শিল্পী দীর্ঘ জীবনে কেবল নিজেই কাজ করে গেছেন তা নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। তৈরি করেছেন নতুন শিল্পও।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাতরাইল ইউনিয়নের নলমুধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বয়ন-নকশা শিল্পী কার্ত্তিক বসাক। শাড়ির জমিন-মুগ্ধকর সব নকশায় ভরিয়ে তোলার নেপথ্যে দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে নিরলস কাজ করে চলেছেন এ শিল্পী।

অনুষ্ঠানে কারুশিল্পী প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক, একটি ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন ‘আশা করছি এই আয়োজন ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা দরিদ্র কারুশিল্পীদের আমাদের সাহায্য করা উচিত। ’

জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে চলছে কারুমেলা। এতে হাতপাখা, বাঁশশিল্প, বাঁশি, শোলাশিল্প, টেপা পুতুল, দারুশিল্প, লক্ষ্মীসরা,  মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, দোতারা, একতারা, অলংকার, শতরঞ্জি, শখের হাঁড়িসহ ২৩টি শিল্পমাধ্যমে অংশ নিয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত  ৪২ জন শিল্পী। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। শেষ হবে ২২ সেপ্টেম্বর।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৪৫, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।