ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

‘শকুনি’ লেক হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
‘শকুনি’ লেক হতে পারে পর্যটনকেন্দ্র মাদারীপুরের ‘শকুনি লেক’

মাদারীপুর: মাদারীপুরের ‘শকুনি লেক’ এখন জেলাবাসীর প্রধান বিনোদনকেন্দ্র। সম্প্রতি সৌন্দর্য বর্ধনের মাধ্যমে শহরের শকুনি এলাকার কৃত্রিম লেকটি দর্শনার্থীদের কাছে আরো বেশি জনপ্রিয় করে গড়ে তুলেছে মাদারীপুর পৌরসভা। 

এখন সুবিশাল এই লেকটিকে পর্যটনকেন্দ্রে এবং একে কেন্দ্র করে মাদারীপুরকে পর্যটন শহরে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছে পৌর কর্তৃপক্ষ।  

সকাল, দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যা- সারাদিনই বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট থাকছে শহরের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা শকুনি লেকের চারপাশ।

ভ্রমণপিয়াসীরা দিনভরই মুখর করে রাখলেও সূর্য যখন বিকেলের দিকে গড়ায়, তখন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।  

বিকেলের দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসা দর্শনার্থীদের মিলনমেলা বসেছে লেকটিকে ঘিরে। জমে উঠেছে বাহারি হালকা খাবার ও শিশুদের নানা খেলনা সামগ্রীর দোকানগুলো। লেকের চারপাশের বিশ্রাম বেঞ্চে অবসর সময় কাটানোদের ভিড়। কেউ বসে, কেউ বা দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন লেকের স্বচ্ছ জলের মৃদু ঢেউ আর জলছোঁয়া বাতাস! ঘুরে বেড়ানো মানুষেরাও বুক ভরে মুক্ত নিশ্বাস নিতে পারছেন।

সন্ধ্যা নামলে এক ভিন্ন আবহ তৈরি হয় অপরূপ সাজে সজ্জিত লেকটির চারপাশে। নানা রংয়ের আলোর প্রতিফলন তখন বাতাসের সঙ্গে মিলে লেকের পানির মৃদু ঢেউয়ে দোল খায়। স্বপ্নচারী মানুষেরাও ভাবনার জগতে ডুবে থাকেন এ ঢেউয়ের ছন্দে।

প্রবীণেরা জানান, ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর শহরের গোড়াপত্তন হয়। আর গত শতকের চল্লিশের দশকে দিকে লেকটি খনন করা হয়। কৃত্রিমভাবে লেকটি সৃষ্টি করা হলেও সময়ের ব্যবধানে সেখানে ফুটে উঠেছে নানা প্রাকৃতিক দৃশ্যও।

মাদারীপুরের ‘শকুনি লেক’

১৯৪৩ সালে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে চলে গেলে শকুনি এলাকার ২০ একর জমিতে লেকটি খনন করে ঐতিহাসিক এ শহরকে তৃতীয়বারের মতো রক্ষা করা হয়।

সে সময় এ অঞ্চলে মাটিকাটা শ্রমিকের অভাব থাকায় এ লেক খননে ভারতের বিহার ও উড়িষ্যা অঞ্চল থেকে দুই হাজার শ্রমিক ভাড়া করে আনে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ওই শ্রমিকেরা টানা কাজ করে প্রায় ৯ মাসে এর খনন কাজ সম্পূর্ণ করেন।

দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০১৩ সালে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করে মাদারীপুর পৌরসভা। গত মার্চে শেষ হওয়া ‘শকুনি লেক’ প্রকল্পটির আওতায় সরকারি অর্থায়নে গড়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, শহীদ কানন, শিশুপার্ক, স্বাধীনতা অঙ্গন, এমপি থিয়েটার মঞ্চ, শান্তি ঘাটলা, পানাহার ও ‘মাদারীপুর ঘড়ি’ টাওয়ার। বছরে লেকটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, ‘মনের প্রশান্তি পেতে শকুনি লেকের পাড়ে আসি। এখানকার চমৎকার পরিবেশে এলে ভিন্ন ধরনের শান্তি অনুভব করি’।

ফেসবুকভিত্তিক ‘মাদারীপুর ফটো গ্যালারি’র সদস্য তানজিল চৌধুরী বলেন, ‘লেকটি সৌন্দর্য বর্ধনে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অসংখ্য মানুষ আসছেন ঘুরতে, সময় কাটাতে। আমরা মাদারীপুর ফটো গ্যালারিতে এ লেকের চমৎকার ছবিগুলো প্রকাশ করেছি, যেন শহরের বাইরের মানুষও এটি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন’।

মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, ‘সৌন্দর্য বর্ধন কাজ শেষ হওয়ায় জেলাবাসীর প্রধান বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে শকুনি লেক। শুধু মানুষের চিত্ত-বিনোদনের জন্যই নয়, জেলাকে পর্যটন শহরে রূপান্তরেও লেকটির গুরুত্ব ব্যাপক। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়া হবে এটিকে। তখন সারাবিশ্বে জেলাকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে এই লেক’।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।