ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

হারিয়ে যাচ্ছে চুন-সুরকির গাঁথুনিও

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
হারিয়ে যাচ্ছে চুন-সুরকির গাঁথুনিও নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি। ছবি: ফজলে ইলাহী স্বপন

কুড়িগ্রাম: জমিদার নেই, জমিদারিও নেই। নেই প্রজা, গোমস্তাও। চুন-সুরকির দোতলা অট্টালিকাও ধ্বংসপ্রায়। ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে কালের স্বাক্ষী ঐতিহাসিক নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি।

কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে ৪০ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী উপজেলায় ভারত সীমান্ত ঘেঁষে এই জমিদার বাড়ির অবস্থান। প্রয়োজনীয় সংস্কার আর দেখভালের অভাবে ধীরে ধীরে এটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হতে চলেছে।

প্রভাবশালী অসাধু ব্যক্তিদের লালসার শিকার হয়ে বেহাত হয়েছে জমিদারবাড়ির অনেক সম্পদ। দীর্ঘ সময়ে লুটপাট হয়েছে ইট-চুন-সুরকির নিপুন গাথুনির বিল্ডিংগুলোর বিভিন্ন অংশ।

পশ্চিম অংশের একটি দোতালা বিল্ডিং ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট আছে শুধু সামনের ম‍ূল বিল্ডিং ও ভেতরের একটা ছোট বিল্ডিং। সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ না থাকায় বাড়িটির অবকাঠামোতে বেড়ে উঠছে আগাছা। নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি।  ছবি: ফজলে ইলাহী স্বপন

জমিদার চলে যাওয়ার পর বাড়িসহ অনেক জমি অবৈধ দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য তাই বিলুপ্তির পথে।

জমিদার বাড়ির গোমস্তা গঙ্গাধর বর্ম্মন এর নাতি বিজয় চন্দ্র বর্ম্মন ও শৈলান চন্দ্র বর্মন বর্তমানে অতীত জমিদারি ও জমিদার বাড়ির স্বাক্ষী ও স্থানীয় উত্তরসুরী।

বাংলানিউজকে তারা জানান, অবিভক্ত ভারতে নাওডাঙ্গা পরগণার জমিদার বাহাদুর প্রমদা রঞ্জন বক্সী এই বাড়ি নির্মাণ করেন। তার ছেলে কুমার বাহাদুর বীরেশ্বর প্রসাদ বক্সী, বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী ও বিপুলেশ্বর প্রসাদ বক্সী জমিদার ছিলেন।

দ্বিতীয় পুত্র বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সীর হাতে জমিদারি ভার ন্যস্ত করে জমিদার প্রমদা রঞ্জন অবসর নেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি সব কিছু ছেড়ে ভারতের কোচবিহার জেলায় চলে যান। সর্বশেষ চল্লিশ সালের রেকর্ডে নাওডাঙ্গার সমস্ত জমি তার নামেই রেকর্ড হয়েছে।

তারা আরো জানান, ভারতের কোচবিহারে পিতার মৃত্যুর পর জমিদার বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী ও তার বংশধররা শ্রদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে সর্বশেষ এসেছিলেন নিজের বাড়িটাকে শেষ দেখা দেখতে। সেই শেষ। আর কেউ কখনো নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়িতে আসেননি। নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি।  ছবি: ফজলে ইলাহী স্বপন

বালারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৌরেন্দ্র নাথ গোস্বামী (পল্টু ঠাকুর) বাংলানিউজকে বলেন, জমিদার বাড়িটি প্রায় দু’শ’ বছরের ঐতিহ্য। জমিদার বাড়িসহ এখানকার অনেক সম্পদ প্রভাবশালীরা দখল করে অনেকেই বাড়ি-বাজার বসিয়েছে।

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক আব্দুল হানিফ সরকার বাংলানিউজকে জানান, জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য অনেক আগেই পুন:সংস্কার করা উচিত ছিল। এতে অতীত ঐতিহ্য থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারতো। দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও জমিদার বাড়িটি দেখতে আসতো।
 
নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সুশীল চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, জমিদার বাড়িটি সংস্কারের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। সরকার উদ্যোগ নিলে সম্পদও উদ্ধার করা সম্ভব।

ফুলবাড়ী উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি ক্ষীরোধ চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রত্ন নিদর্শন রক্ষা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার জমিদার বাড়ির সম্পদ দখল মুক্ত করার পাশাপাশি পুনসংস্কার করলে নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারতো।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।