ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

নতুন কুঁড়িতে হাসছে চা বাগান

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
নতুন কুঁড়িতে হাসছে চা বাগান নতুন কুঁড়িতে হাসছে চা বাগান, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): চা বাগানজুড়ে এখন কচি সবুজ রঙের ছোঁয়া। পাতায় পাতায় বৃষ্টি মেখে এই সবুজ সদ্য অঙ্কুরিত। প্রতিটি টিলা-সমতল প্রান্তরে সবুজের সমারোহ। সেই সতেজ আর স্নিগ্ধ রূপ নিয়ে দু’টি পাতা একটি কুঁড়িরা এখন বাগানে বাগানে মাথা তুলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি বাগানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চা বাগানের রূপ এখন এমন। সম্মিলিত সবুজের অপূর্ব জেগে ওঠা!  
 
কিছুদিন আগে এই চা গাছের মাথা ছাঁটাই (প্রুনিং) করা হয়েছিল।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতি বছর এভাবে চা গাছগুলোর মাথা নির্দিষ্ট মাপ অনুসারে ছেঁটে ফেলা হয়। তারপর চলে অপেক্ষাপালা। চা শ্রমিক, সর্দার (দলের প্রধান), বাবু (ক্লার্ক) এবং ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) এরা গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন এদিনটির জন্য। চা বাগানে কখন কুঁড়িরা চোখ মেলে তাকাবে।
উঁচু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি কুড়ি, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
হঠাৎ বৃষ্টির দখলে পড়ে একসময় স্বস্তি ফিরে পায় চা গাছগুলো। সেই বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় উর্বর হয় প্রকৃতি। সেই উর্বরতার দিগন্তবিস্তৃত উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে হাসতে থাকে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দল।

চা বাগানের পথ ধরে এগোলোই এখন চোখে পড়ে ঘনসবুজের ছড়াছড়ি। পাহাড়ি টিলার ধূসর মাটির বুক থেকে সেই সবুজেরা যেন আজ সদলবলে প্রস্ফুটিত।  
 
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় ভাড়াউড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা গেলো সেই কুঁড়িদের গায়ে জমেছে শিশিরকণা। শিশিরের জলজ পরশে ঘনসবুজ পাতাগুলো গভীর সৌন্দর্যে রাঙা হয়ে আছে। সকালের সূর্যালোক তার কিরণটুকু নিয়ে এসে ভাগ বসিয়েছে তাতে।
 
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার মো. হারুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ৬ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে ৭৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।    
উঁচু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি কুড়ি, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
চা বাগানে এখন সবুজ জেগে উঠেছে। যা দৃষ্টি ও হৃদয়কে দারুণভাবে মুগ্ধ করে বলে জানান শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের এই আবওয়াবিদ।
 
ওই চা বাগানের ১ নম্বর সেকশনের প্রহরী টুনু বলেন, প্রায় দু’মাস আগে কাটা হয়েছে গাছগুলো। কয়েকদিন আগের বৃষ্টি পেয়ে এখন ওরা কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে।
 
যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর থেকে বেশি বড় হয়ে গেছে সেগুলোকে ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে বলে জানান ওই প্রহরী।  
 
ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক পূর্ণিমা বাকতির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল – চা বাগানের নতুন কুঁড়িগুলো তোলার অনুভূতি কেমন? তিনি জানান, এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। সব একই রকম লাগে। তবে বৃষ্টির পরে যে কুঁড়িগুলো বের হয় তা চকচকে সবুজ থাকে।
 নতুন কুঁড়িতে হাসছে চা বাগান, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
ইস্পাহানি কোম্পানির চা বাগান ‘জেরিন টি এস্টেট’ এর ম্যানেজার সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, নতুন কুঁড়ির জন্য আমরা আকাঙ্ক্ষায় থাকি। আমরা যারা চা বাগানে কাজ করি তারা এমন আশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি যে কখন কুঁড়ি গজাবে, তখন গাছ সবুজ হবে।
 
বসন্ত এলে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখে হৃদয়ে যেভাবে দারুণ অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পর চা গাছে নতুন কুঁড়িতে ভরে উঠতে দেখলে আমাদেরও হৃদয়ও গভীর আনন্দিত হয়ে উঠে। এই নতুন কুঁড়িই তো আমাদের চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে।
 
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, আগাম বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চা-শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে গত চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।