ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

কোকিলের কুহুতানে ঘর ছেড়েছে তারুণ্য

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
কোকিলের কুহুতানে ঘর ছেড়েছে তারুণ্য খোঁপায় ফুল না গুজলে কি বসন্তবরণের সাজ হয়? ছবি: সৌরভ হোসেন

রাজশাহী: ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে। মধুর মলয়-সমীরে মধুর মিলন রটাতে। কুহক লেখনী ছুটায়ে কুসুম তুলিছে ফুটায়ে, লিখিছে প্রণয়-কাহিনী বিবিধ বরন-ছটাতে’।ঋতুরাজকে আলিঙ্গনের আহ্বান জানিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমীয় বাণীটি এখন সত্যিই তারুণ্যের মনে দোলা দিয়েছে।

দুয়ারে আগুনরাঙা বসন্ত দেখে সবার মন যেন ছুটে যেতে চাইছে অরণ্যে। যেখানে কাননে কাননে উৎসবের রঙের কোলাহলে মেতে উঠেছে চারদিক।

গাছের কচি পাতায় ফাগুনের ছোঁয়া। দক্ষিণা বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহু কুহু গানে আজ তাই ঘর ছেড়েছে তারুণ্য।  

তাইতো মধুময় যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্তে আজ মেতে উঠেছে রাজশাহী। বাঁধ ভাঙা আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় নানা আয়োজনে সবাই ঋতুরাজকে সাড়ম্বরে বরণ করে নিচ্ছে। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পয়লা ফাল্গুন সকাল থেকেই বসন্ত বরণ উৎসবে মুখোরিত হয়ে উঠেছে এই নগর।  

ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ ভিন্ন আবহে প্রাণ উজাড় করে যোগ দিয়েছেন বসন্তবরণ উৎসবে। বাসন্তী রঙের বর্ণিল শোভাযাত্রা, কবিতাপাঠ, নাচ আর গানের ছন্দে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে চলছে ফাল্গুনী উৎসব। স্বপ্নজয়ী তারুণ্যের ঢেউ লেগেছে যেনে সব আয়োজনেই।  বসন্তবরণের সাজে তরুণীদের সেলফি উৎসব।  ছবি: সৌরভ হোসেনবরাবরের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস; বিশেষত চারুকলা এবারও রয়েছে বসন্তের মূল আকর্ষণ। প্রতিবছরের মত এবারো সেখানে বেজে উঠেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। এছাড়া রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসেও লেগেছে বাসন্তী উৎসবের ঢেউ। শীতের শুকনো পাতার মরমর ধ্বনি ভেঙে উৎসাহ উদ্দীপনায় শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধু আর সহপাঠীদের নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছেন।  

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী কলেজ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।  

এতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বাদ্য-বাজনার ছন্দে ছাত্রীদের হলুদ শাড়ি আর ছাত্রদের হলদে পাঞ্জাবি বরণে শোভাযাত্রাটি পুরো শহরে যেন জানান দেয় আজ বসন্তের দিন। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজে গিয়ে শেষ হয়। বসন্তবরণে রাজশাহী কলেজের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।  ছবি: সৌরভ হোসেনএদিকে, নগরীর বিভিন্ন বিনোদন স্পটেও তরুণ-তরণী যুবক-যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঢল নেমেছে। মেয়েদের পরনে হলুদ রঙের শাড়ি, খোপায় গাঁদা ফুল, আবার কারও কারও খোপায় রঙিন ফুলের রিং। ছেলেদের পরনে রয়েছে হলুদ অথবা সফেদ রঙের পাঞ্জাবি।  

বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে গিয়ে মোবাইল ফোন দিয়েই অনেককে ফটোসেশন সারতে দেখা গেছে। বন্ধুদের নিয়ে জটলা করে মোবাইলের ক্যামেরায় সেলফি তুলেও তা স্মৃতিবন্দি করছেন অনেকে।  

সকাল থেকে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামান উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া পার্ক, বড়কুঠি পদ্মাপাড়ে, টি-বাঁধ, ভদ্রার শহীদ মনসুর রহমান পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে, কেউ প্রিয়তম, কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন বাহনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। বসন্তবরণে সইয়ের খোঁপায় ফুল গুঁজে দিচ্ছেন আরেক সই।  ছবি: সৌরভ হোসেনএদিকে, দিনটি উপলক্ষে রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে শোভাযাত্রা বের করবে। পরে রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে ঢাকবাদ্য, আবৃত্তি, নিবেদিত কবিতাপাঠ, গান ও নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের জেলা শাখা, কবিকুঞ্জ, ধ্রুপদালোক ও রাজশাহী আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র এতে অংশগ্রহণ করবে।

এছাড়া নিক্কন নৃত্যশিল্পী গোষ্ঠীও বসন্তকেবরণ করতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।