ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

প্রকৌশলী হওয়াটা বড় নয় ভালো মানুষ হওয়াটাই সবচাইতে বড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১১
প্রকৌশলী হওয়াটা বড় নয় ভালো মানুষ হওয়াটাই সবচাইতে বড়

অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক এবং পরবর্তীতে ১৯৮৩-১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকত্তর; একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে পিএইচডি সম্মান অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্সের পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর শিক্ষকতা জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রকৌশল বিভাগে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান প্রসঙ্গে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- শেরিফ আল সায়ার

১. বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ে কিছু বলুন।

** এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে শুরুতেই আপনাকে একটু পেছনে যেতে হবে। প্রথমত হলো, বাংলাদেশে কেনো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তরটা শুরুতে জানতে হবে। উত্তরটি খুব সরাসরি বলি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদের দেশের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা ভর্তি হয়। সেসময় তাদের বুকে থাকে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। অথচ সেশন জট থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সমস্যাগুলো তাদের সেই স্বপ্নকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেয়। দেখা যায়, চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ করতে তাদের সময় লেগে যায় ছয় থেকে সাত বছর। চাকরীর বাজারে এতে করে তারা অনেক পিছিয়েও পড়তে শুরু করে। এটা ছিল প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণটি হলো, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সেখানে পড়ার সুযোগ হারায়। ফলে ঘটে স্বপ্নের বিপর্যয়। মূলত এই দুটি কারণ বিবেচনা করেই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এবার আসি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ে। মানের দিক থেকে বর্তমানে সব বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে আছে আমি তা বলব না। অনেকেরই অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু সকলেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর চেষ্টা করছে। তবে তা অবশ্যই পড়াশোনার মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য। অভিজ্ঞ শিক্ষক, মান সম্পন্ন ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব, এই সকল সুযোগ-সুবিধা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে। আর সময়মতো পড়াশোনা শেষ করে চাকরীর বাজারে ঢুকে যাওয়াটা তাদের সময়কে অনেকটাই বাঁচিয়ে দিচ্ছে বলে আমি মনে করি। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বয়স আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বয়সও তো আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে। তবে ধীরে ধীরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে দক্ষ-জনবল দিতে পারছে বলে আমি মনে করি।

২. বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা কতোটা মান সম্পন্ন?

** আমি শুরুতেই বলেছি, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ পায় না। অথচ তারা বুকে লালন করছে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন। তাদের সেই স্বপ্ন অনেকটাই এখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পূরণ করছে। তারা মানের দিক থেকে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। আমাদের শিক্ষকরা তাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে। আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছি; আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি সব সময় আমার শিক্ষার্থীদের যে কোনো সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত থাকি। শুধু আমি কেন! আমার অন্যান্য কলিগরাও তাদের পাশে থাকে। আর সহযোগিতা না দেবার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।   ছেলে-মেয়েরা এখানে পড়ছে টাকা দিয়ে। আমরা তাদের সকল অসুবিধার কথা শুনতে এবং সমস্যার সমাধান দিতে বাধ্য।

৩. আপনি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন সেখানে কী প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছে?

** শুরুতেই আপনাকে বুঝতে হবে সুযোগ-সুবিধা বলতে কী বোঝায়। একটি প্রকৌশল বিভাগের সর্বোচ্চ গুরুত্ব হচ্ছে, ব্যবহারিক ল্যাব। এবং সেই ল্যাবে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্রপাতি। যা আমরা দিতে সক্ষম। প্রতিটি বিষয়ের জন্য আমাদের পৃথক পৃথক ল্যাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ল্যাবের জন্য আমাদের শিক্ষকও নিয়োগ করা আছে। তাদের কাজই হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ল্যাবে কাজ করলে সহযোগিতা করা। এছাড়াও আমাদের আছে গবেষণাগার। উদ্ভাবনী মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা গবেষণাগারে কাজ করে থাকে। এছাড়াও কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তো যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাধ্যতামূলক বলে মনে আমি মনে করি।  


৪. বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতা নিয়ে কিছু বলুন।

** আমি বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষার্থীর কাছে পড়াশোনাটাই বড় বিষয় নয়। আর সৃষ্টিশীল জাতি বলতে শুধু বিজ্ঞানের বিষয়েই সৃষ্টি করে যাবে তাও কিন্তু নয়। জীবনকে অনুভব করতে হবে। আমি সবসময় আমার ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ দেই শিল্পমাধ্যম নিয়ে কাজ করবার। আর তারা উৎসাহ পাচ্ছেও। আমরা বছরে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজ করে থাকি। সেখানে তারা যা শিখতে পায় তা হাজার বই পড়েও শেখা সম্ভব নয়। যে কোনো জায়গায় চাকরী বলেন আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কথা বলেন; প্রয়োজন হয় টিম ওয়ার্কের। আর সেই টিম ওয়ার্ক তারা শিখবে বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে। এই কাজগুলো করতে গেলে তাদের ভেতরকার সৃষ্টিশীলতা তারা নিজেরাই আবিস্কার করবে।

৫. খুদে প্রকৌশলীদের প্রতি অর্থাৎ যারা প্রকৌশল বিভাগে পড়তে চায় তাদের প্রতি আপনার কোন পরামর্শ আছে কী?

** পরামর্শ একটাই- সব বিষয়ে পড়াশোনা করো। এবং পড়ার সীমাবদ্ধতা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই রেখো না। পৃথিবীতে জানার অনেক কিছু আছে। পৃথিবীর প্রতিটি শিল্পকে বিজ্ঞানের সাথে মিলিয়ে দেয়া যায়। বিজ্ঞান ছাড়া এ পৃথিবী কখনও এগিয়ে যেতে পারবে না। বলতে হয়, ভবিষ্যত পৃথিবী তোমাদের উপরই নির্ভর করছে। আর তাই নিজেদের গড়তে হবে সেভাবেই। মনের দুয়ারটাকে খুলে ফেলো। মানুষকে ভালোবাসো। দেশকে ভালোবাসো। দেশের জন্য কিছুর করার অভিপ্রায় নিয়ে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে হবে। এটাকে আমার পরামর্শ কিংবা ভবিষ্যত প্রকৌশলীদের প্রতি চাওয়াও বলতে পারেন। কারণ, প্রকৌশলী হওয়াটা বড় নয় ভালো মানুষ হওয়টাই সবচাইতে বড়।


বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬, মে ৩১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।