ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

বিশ্ববিখ্যাত জাদুশিল্পী টনি হাসিনির সাক্ষাৎকার

পাশ্চাত্যের জাদুশিল্পীরা তাকিয়ে থাকেন প্রাচ্যের দিকে

রবাব রসাঁ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১১
পাশ্চাত্যের জাদুশিল্পীরা তাকিয়ে থাকেন প্রাচ্যের দিকে

ঢাকায় অবস্থান করছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিশিয়ান সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট টনি হাসিনি। উদ্দেশ্য, জাদুর জগতে ‘অস্কার’ হিসেবে আদৃত ‘দ্য মার্লিন অ্যাওয়ার্ড’-এর এ বছরের বিজয়ী বাংলাদেশের জাদুশিল্পী আলীরাজের হাতে তুলে দেওয়া।

পুরস্কার প্রদানের প্রাক্কালে জাদুশিল্পের এই গুরু কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রবাব রসাঁ

ছোটবেলা থেকেই কানেও শুনেন একটু কম, চোখেও আছে সমস্যা। ১৯৪১ সালে জন্মেছিলেন উত্তর সাইপ্রাসের দারিদ্র্যপীড়িত এক তুর্কি পরিবারে। একটু সুখের আশায় শৈশবেই বাবার সাথে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। তখন ইংরেজির ‘ই’-ও জানতেন না। কিন্তু আজ সব অতীত-স্মৃতি মাত্র। জীবনে এসেছে যশ-খ্যাতি। এসেছে জগৎজোড়া পরিচিতি।

এই মানুষটির নাম টনি হাসিনি। বিশ্বব্যাপী জাদুশিল্পীদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিশিয়ান সোসাইটি’র তিনি প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। সারা দুনিয়ার ৩৭ হাজার জাদুশিল্পী আজ এই সংগঠনের সদস্য। এদের সবার কাছে তিনি অতি আদরের, শ্রদ্ধার।

‘বুঝতেই পারছেন কেমন কেটেছিল আমার শৈশব। তেমন কোন বন্ধুও ছিল না। থাকবেই বা কেন! আমি তো আর তাদের মতো নই! শারীরিক সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছিল লাজুকতা। ছেলেবেলার বন্ধুরাও যেমন কাছে ভিড়ত না, আমিও তেমনি স্বভাবসুলভ লাজুকতার জন্য একটু দূরে দূরেই থাকতাম। ’ কেমন করে জাদুর জীবন শুরু হলো এমন প্রশ্নের জবাবে কথাগুলো বলেন হাসিনি।

এরপর, একদিন ঘটল অভূতপূর্ব ঘটনা। তখন তিনি পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে অভিবাসী। ১৬ বছর বয়স। খুব ঘনিষ্ঠ নয় এমন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে কী যেন একটি ঘটে গেল। অনেকটা জাদুর মতো। ‘বন্ধুটি অবাক হয়ে জানতে চাইল কেমন করে এমনটি হলো। আমিও অবাক, কেমন করে এমন জাদু দেখালাম। সেই প্রশ্নের উত্তর আমি তাকে দিতে পারিনি বটে, তবে জীবনে এল এমন পরিবর্তন যার ফলে আজ আমি এখানে। ’

শৈশবে হাসিনি যখন সবার সুদৃষ্টির বাইরে, তখন তার অবচেতন মনে বিরাজ করছিল অদ্ভুত এক বাসনা : ‘কেমন করে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ’ বন্ধুর সঙ্গে সেই ঘটনা মনে করে হাসিনি আবিষ্কার করলেন, ‘জাদুর মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ’

সেই থেকেই শুরু। শিখলেন জাদু। হলেন জাদুশিল্পীদের নমস্য। ১৯৬৮ সালে নিউ ইয়র্কে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিশিয়ান সোসাইটি’।

‘জাদুশিল্পের ব্যাপক বিকাশ পাশ্চাত্যে হলেও এর জন্ম কিন্তু প্রাচ্যে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ তথা এই উপমহাদেশকে জাদুশিল্পের অন্যতম উৎপত্তিস্থান হিসেবে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। পাশ্চাত্যের জাদুশিল্পীরা তাকিয়ে থাকেন প্রাচ্যের দিকে। জাদুশিল্পে বাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে এ দেশের জনমনে জাদু সম্পর্কে বাজে ধারণা সৃষ্টি হয়ে আছে। এসব ভুল ধারণা থেকে তরুণদের মুক্ত করতে হবে। তাদের ভেতর সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এবং জাদুশিল্পের আনন্দময় দিকগুলো তুলে ধরতে হবে,’ হাসিনির অভিমত।

বাংলাদেশের জাদুশিল্পী আলীরাজের পুরস্কার পাওয়া প্রসঙ্গে বললেন, ‘বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যময় জাদুশিল্প আলীরাজ তুলে ধরছেন বলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ব্যাপক সুনাম হয়েছে। আমরা তার কাজের মৌলিকতা ও ঐতিহ্য-সংশ্লিষ্টতা দেখে মুগ্ধ হয়ে এ বছরের ‘দ্য মার্লিন অ্যাওয়ার্ড’ তাকে দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছি। ’

হাসিনির দৃষ্টিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জাদুশিল্পের মৌলিক পার্থক্যের মূলভিত্তি হলো ‘মরমীবাদ’। তিনি বলেন, ‘পাশ্চাত্যের জাদুগুলোতে দেখবেন নাচ-গানের প্রাধান্য। সেখানে জাদুটাই যেন হারিয়ে যায়। প্রাচ্যের জাদুতে রয়েছে ঐতিহ্য এবং মরমীবাদ। এখানে রয়েছে প্রাণের স্পর্শ। পাশ্চাত্যের জাদুতে জমকালো ভাবটাই বেশি। ’

পাশ্চাত্যের জাদুশিল্পীদের আর্থিক সচ্ছলতা ও তারকাখ্যাতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে পাশ্চাত্যের জাদুশিল্পীরা খুব সুন্দর করে তাদের অনুষ্ঠানগুলো সাজিয়ে নেন। খুব জমকালোভাবে সেগুলো পরিবেশন করেন। ফলে সেগুলো খুব আকর্ষণীয় হয়। সারা পৃথিবীতে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এবং বাণিজ্যিকভাবেও অনুষ্ঠানগুলো বেশ সফল হয়। ’

এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচে আলোচিত জাদুশিল্পী ডেভিড কপারফিল্ডের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার অনুজ ও স্নেহভাজন এই জাদুশিল্পী ডেভিড আজ কত সুনাম অর্জন করেছেন! তিনি একেকটি অনুষ্ঠানে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তা সত্যিই অভাবনীয়!’

তিনি জাদুশিল্পকে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পারফর্মিং আর্ট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘জগৎজুড়ে, বিশেষত পাশ্চাত্যে জাদুশিল্পীরা ব্যাপক সম্মান ও সম্মানী পেয়ে থাকেন। ধীরে ধীরে প্রাচ্যেও এর প্রভাব পড়ছে। ’

তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এলেও মনে করছেন যেন আগেও অনেকবার এসেছেন। ‘লোকজন এমনভাবে হাসিমুখে কথা বলেন যেন মনে হয় আমি তাদের কত দিনের পরিচিত। আমি তাদের কত প্রিয় মানুষ। নিঃসন্দেহে আমি এগুলো উপভোগ করছি। আসলে, আমি আমার নিজের দেশেই যেন এলাম অনেক দিন পর। ’

বাংলাদেশ সময় ১৮৪০, জানুয়ারি ৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।