রাজধানী ঢাকার রাস্তাজুড়ে এখন শুধুই ‘ভাই কত দামে নিলেন’ এ কথারই ধ্বনি-প্রতিধ্বনি। এর মানে দুয়ারে ঈদুল আজহা।
এবারের কোরবানির পশুর হাটে সবচে আলোচিত বিষয় অ্যানথ্রাক্স আর হরতাল। এ দুটি শব্দ বিশেষত গরু বিক্রেতা আর হাট ইজারাদারদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। তবে এ দুটি আতঙ্ক কাটিয়ে হাটগুলোতে এখন ক্রেতাসমাগম বাড়তে শুরু করেছে। কারণ সময় নেই একেবারেই।
সময়ের পরিবর্তনে এখনকার হাটগুলো অনেক বেশি নান্দনিক আর আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত। রাতে মশার উৎপাত থেকে রেহাই পেতে হাটগুলোতে ক্রেতাবান্ধব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গাবতলীর হাটে উটের উপস্থিতিও নজর কাড়ছে।
বড় বড় হাটগুলো যেমন একদিকে সুসজ্জিত হয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে, অন্যদিকে খুচরো এবং পাড়াকেন্দ্রিক ছোট ছোট হাটও এবার বেশ জমজমাট। বড় হাটের ব্যবসায়ীদের ধারণা, পাড়াকেন্দ্রিক ছোট হাটের কারণেই তারা এখনও প্রত্যাশিত ক্রেতাদের সাড়া পাননি। এ নিয়ে তারা বেশ চিন্তিতও। ঈদের আগে তাদের গরুগুলো বিক্রি হবে তো-- এমন প্রশ্ন বড় বিক্রেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ অনেক ক্রেতাই ঝক্কি এড়াতে পাড়া-মহল্লার ছোট হাট থেকেই কোরবানির পশু কিনে ফেলেছেন।
অ্যানথ্রাক্স
এবারের কোরবানির হাটে দেশি গরুর চাহিদা বেশি। কিছুদিন আগে দেশজুড়ে অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ায় এবারের পশুর হাটেও এ নিয়ে প্রশ্ন অনেক। তবে গবাদিপশু ব্যবসায়ীরা বলছেন, যতই অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক থাকুক না কেন গরু কোরবানির হার কমবে না আর অ্যানথ্রাক্স-আতঙ্কের কারণে গরুর দামও কমবে না। বরং গরুর সঙ্গে খাসি কোরবানির সংখ্যাও আগের চেয়ে বাড়বে।
হরতাল
অন্যদিকে হঠাৎ হরতালের বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে। হাটের নির্ধারিত তিন দিনের প্রথম দিন ছিল রোববার। ওই দিনই হরতাল থাকায় বাজার বেশ রকমের ধাক্কা খেয়েছে। ওইদিন ক্রেতারা হরতালের কারণে হাট ঘুরে যাচাই করলেও কিনেছেন খুবই কম। আগারগাঁও হাটে হরতালের দিন ক্রেতা থাকলেও বিক্রি হতাশ করেছে বিক্রেতাদের।
গাবতলী, তালতলা আর আগারগাঁও এ তিনটি কোরবানির হাটে ক্রেতাসমাগম এখনও অনেক কম বলে বাংলানিউজকে জানান সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরু-ব্যবসায়ী রহিমউদ্দিন। অনেকটা হতাশাভরা কণ্ঠে তিনি জানান, এবার তিনি ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন। এগুলো দাম ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছেন ২০ থেকে ২৮ হাজার পর্যন্ত। অথচ এ দামে গরু বিক্রি করতে হলে তাকে অনেকটা লস গুনতে হবে।
পাড়ার ছোট আর ফিক্সড প্রাইস হাট
ইদানীং ছাগল-খাসি ক্রেতারা ঝক্কিঝামেলা থেকে বাঁচতে সরাসরি বড় হাটে যেতে নারাজ। পাড়ার মোড়ে কিংবা প্রধান সড়কের পাশেই দাঁড়িয়ে ছাগল কেনাটা এখন অনেকেরই পছন্দ। তবে পাড়ার মোড়গুলো থেকে শুধু ছাগল নয়, গরুও কিনছেন ক্রেতারা।
অনেক জায়গায় মাত্র ২০ থেকে ২৫টি গরু নিয়ে পাড়ার ভেতরের খালি স্থানে অস্থায়ী হাট বসিয়েছেন ক্ষুদে বিক্রেতারা। অনেকে এক সিজোনাল ব্যবসা বলে উল্লেখ করছেন। গড়ে প্রতিটি গরু পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে এ হাটগুলো বসানো হয়েছে বলে এসব খুচরা বিক্রেতারা জানান।
পাড়া-মহল্লায় বসা এসব ছোট হাটে ক্রেতাসমাগম মন্দ নয়। অনেকে এখান থেকে ‘ফিক্সড প্রাইসে’ গরু-ছাগল কিনছেন। ছাগল হলে দাম পড়ছে ৬ থেকে ১০ হাজার। আর গরু হলে ২৫ থেকে ৫৫ হাজার। ঝক্কিঝামেলা আর সময় বাঁচানোর তাগিদে বাড়ির পাশের নির্ধারিত দামের হাট এখন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সঙ্গে থাকছে না হাট থেকে গরু কিনে বাসায় ফেরার বাড়তি টেনশন।
আগারগাঁওস্থ হাটের সূত্র জানিয়েছে, এভাবে রাস্তার পাশে অস্থায়ী, ভ্রাম্যমাণ আর পাড়া-মহল্লার ভেতরের হাটগুলো বড় বড় হাটের চাহিদায় ভাটা ফেলছে। ফলে পশু বিক্রেতারাও হাটে না থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী ঈদগুলোতেও হয়তো পাড়া-মহল্লার ‘ফিক্সড প্রাইস‘ হাটের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৯৫০, নভেম্বর ১৫, ২০১০