ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

তরুণরা ইন্টারনেটে আয় করছে: নাসির উদ্দিন শামীম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১২
তরুণরা ইন্টারনেটে আয় করছে: নাসির উদ্দিন শামীম

বাংলাদেশে প্রফেশনাল ব্লগিং এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং কমিউনিটিতে খুবই পরিচিত নাম হচ্ছেন নাসির উদ্দিন শামীম । ২০০৭ সাল থেকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্লগিং করে যাচ্ছেন।



পেশাদারি ব্লগিং এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং বিষয়েই নিজেকে আটকে রাখেননি। নিজের ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে তিনি তরুণদের ইন্টারনেটে আয়ের বিষয়গুলো নিয়ে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছেন।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশি ইন্টারনেট মার্কেটিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডেভসটিম লিমিটেডের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

পেশা হিসাবে প্রফেশনাল ব্লগিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বাংলাদেশি তরুণদের জন্য কতটা উপযোগী, কিভাবে শুরু করতে হয় এবং এ ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাসির উদ্দিন শামীমের সঙ্গে কথা বলেন তানজিল আহমেদ জনি। সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরা হল।
 
কিভাবে আপনি শুরু করেছিলেন..

২০০৭ সালের প্রথম দিকের ঘটনা, আমি তখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছি। ইন্টারনেটেই প্রফেশনাল ব্লগিং সম্পর্কে জানতে পারি, এরপর শুরু হয় ব্যাপক পড়াশোনা। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই জানাশোনা, গাইডলাইন ফলো করে কাজ শুরু করা। আমরা সেসময়ই দেশে প্রফেশনাল ব্লগিংয়ের শক্ত কমিউনিটি তৈরি করতে পেরেছিলাম। আর কমিউনিটির সবার অবাধ সহযোগিতার কারণে সফল হতে বেশি সময় লাগেনি।

বাংলাদেশ থেকে ব্লগিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজের সম্ভাবনা কেমন?

অনলাইনে টাকা আয়ের সবচেয়ে বড় যে উপায়, সেটিই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, শুধু অ্যাফিলিয়েট মাকের্টিংয়ের মাধ্যমে মার্কেটাররা আয় করছেন ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই বাজারের ১ শতাংশও যদি আমরা ধরতে পারি তাহলে প্রতি বছর দেশে আসবে ৪০০ কোটি টাকা। এই জায়গাটিতে পৌঁছনো খুব একটি কঠিন বলে আমি মনে করিনা।

আবার ব্লগ লিখে গুগল অ্যাডসেন্সসহ বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও নিজের সাইট থেকে আয় করা যায়। এখান থেকেই আমাদের তরুণদের কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে এখন এমন গুগল অ্যাডসেন্স পাবলিশার রয়েছেন যারা ব্লগ লিখে আয় করছেন ৩ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত। বাংলাদেশি তরুণরাই যে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছেন তা আমি নিজেও জানতাম না এতদিন।

সম্প্রতি ব্যাংকে আমার চেক জমা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অফিসারের মুখেই শুনেছি একজন তরুণের গল্প, যে কিনা প্রতিমাসেই ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলারের গুগল অ্যাডসেন্স চেক জমা দেয়।

দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অন্যরাও এখন বিশাল এই বাজারে প্রবেশ করতে পারেন। আমাদের মধ্যে এখন সচেতনতা দরকার এবং সেইসঙ্গে উদ্যোগ।

বাংলাদেশি ব্লগাররা বেশি কোন সমস্যায় পড়েন?

ইন্টারনেটে কনটেন্ট তৈরি করতে হলে এবং এ থেকে আয় করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি কনটেন্ট ডেভেলপ করা জানতে হবে, অর্থাৎ কনটেন্ট তৈরিতে যেমন দক্ষতা থাকতে হবে তেমনি ইংরেজিও ভালো লিখতে জানতে হবে। দু:খজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের অধিকাংশ তরুণ ইংরেজিতে খুবই দুর্বল , আর এ কারণেই কনটেন্ট ডেভেলপমেন্টে ভালো কিছু করতে পারেনা।

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে আমরা সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে জানিনা। একটি ব্লগ পোস্ট যে আমি লিখলাম, সেটিকে তো পাঠকের পৌঁছাতে হবে, নাকি? কিন্তু অধিকাংশ ব্লগার জানেননা একটি ব্লগের মার্কেটিং আসলে কিভাবে করতে হয়। এজন্য কমিউনিটি তৈরি করা, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন জানা এবং ব্লগের ব্র্যান্ডিং সহ নানা বিষয় জানার প্রয়োজন হলেও আমরা সেগুলো ভালোমতো জানিনা, জানতে চেষ্টাও করেনা।

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে গুগলের অ্যাডসেন্স পাবলিশারদের অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যাওয়া। বাংলাদেশি কোন পাবলিশারের ওয়েবসাইটে একটু বেশি ক্লিক থ্রু রেশিও (সিটিআর) অর্থাৎ ক্লিকের হার বেশি হলেই অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যায়। এ কারণেই অনেক ব্লগার মাঝ পথে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আমি নিজেও একবারে ২ লক্ষ টাকা সহ গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ব্যান খেয়ে অনেকদিন ব্লগিং থেকে দূরে ছিলাম, যদিও ব্লগিং আগ্রহ আমাকে ব্লগ লেখা থেকে বেশিদিন দূরে রাখতে পারেনি। আমার ধারণা, অধিকাংশ বাংলাদেশি ব্লগার এ সমস্যাটিতে বেশ ভোগেন।

নতুনদের জন্য কিছু করছেন কি?

আপনি হয়ত জানেন আমাদের ডেভসটিম লিমিটেডের একটি অঙ্গ-সংস্থা রয়েছে ডেভসটিম ইন্সটিটিউট। আমরা এটি তৈরি করেছি বাংলাদেশি তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই। অনলাইনে শত বিলিয়ন ডলারের একটি বাজার রয়েছে; যেখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পাওয়া কঠিন কিছু নয়। দরকার কেবল দক্ষতা এবং মেধার সমন্বয়।

যেহেতু আমাদের দেশে প্রচুর মেধাবী তরুণ রয়েছে তাই তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বিশাল একটি গেটওয়ে তৈরির জন্য কাজ করছি।

ভারত কিংবা ফিলিপাইনের তরুণ-তরুণীরা অনলাইনের বাজারের বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে। তাদের সে জায়গার একটি উল্লেখযোগ্য স্থান যাতে আমরা পেতে পারি সে লক্ষ্যেই আমাদের কাজ। ডেভসটিম ইন্সটিটিউটে বর্তমানে প্রফেশনাল ব্লগিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, অ্যাডভান্সড এসইও, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট, কিলার কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট সহ বেশকিছু দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।

তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পরামর্শ দিতে চান?

বিভিন্ন সময় যে পরামর্শ দেই সেটি হল, কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই কাজটি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা নিয়েই মাঠে নামতে হবে। এরপর কাজ করতে করতে শেখা যাবে। কিন্তু ন্যূনতম জ্ঞান না নিয়ে যদি আপনি এ ক্ষেত্রে নামেন তবে শ্রম বৃথা যাবে।

বাংলানিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad