ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

কিংবদন্তি

ফ্যানের বাতাসে মৃত্যু হয়!

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১০
ফ্যানের বাতাসে মৃত্যু হয়!

গ্রীষ্মের দুপুর কিংবা রাতে অসহ্য গরমে আমাদের মাথার ওপর সারাণ যে জিনিসটি বন বন করে ঘুরে আমাদের প্রশান্তি দেয়, তার নাম ফ্যান বা বৈদ্যুতিক পাখা। বিদ্যুতের বদৌলতে হাতপাখার বদলে আমরা পেয়েছি আধুনিক ফ্যান।

পেয়েছি সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, ওয়াল ফ্যানসহ অনেক ধরনের ফ্যান। গরমের হাত থেকে বাঁচতে মধ্যবিত্তের একমাত্র অবলম্বন এই ফ্যান। কিন্তু এই ফ্যানের বাতাসে মৃত্যু হয় এমন কথা শুনলে আমরা কি আর বন বন করে ঘোরা যন্ত্রটির বাতাস গায়ে লাগাব?

আধুনিক যন্ত্র বলে ফ্যান নিয়ে পৃথিবীর কোথাও কোনো কিংবদন্তি কিংবা লোকবিশ্বাস থাকার কথা নয়। বলতে গেলে নেইও। কিন্তু বিস্ময়কর এই পৃথিবীর মতো মানুষের মনও বিস্ময়কর। মানুষের মন কখন যে কী বিশ্বাস করে ফেলে তাও বিশ্বাস করা কঠিন। তাই দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় ফ্যান নিয়েও ছড়িয়ে আছে এক লোকবিশ্বাস। সেখানকার সাধারণ মানুষ মনে করে, ফ্যানের বাতাসে মানুষের মৃত্যু হয়। তারা প্রবলভাবেই বিশ্বাস করে, দরজা জানালা বন্ধ করে কেউ যদি সারারাত ফ্যান চালায় সে নির্ঘাৎ মরে যাবে। তাই দক্ষিণ কোরিয়ার ফ্যান কোম্পানিগুলোর ফ্যানের সঙ্গে টাইমার সংযুক্ত থাকে, যাতে ঘুমের সময় ফ্যান কতক্ষণ ঘুরবে তা ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট করতে পারে।
 
‘ফ্যানের বাতাসে মৃত্যু হয়’ দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস যেমন প্রবল, তেমনি সেখানকার গণমাধ্যমগুলোও এই বিশ্বাসের পেছনে কাজ করে। ঘরে ফ্যান ঘোরা অবস্থায় ঘুমের মধ্যে হার্ট ফেইল করে কিংবা অন্য কোনো কারণে কেউ মরে গেলেই সেটাকে ‘ফ্যান ডেথ’ হিসেবে সেখানকার গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সরকারও কাজে লাগিয়েছে এই লোকবিশ্বাস। বলা যায়, এই বিশ্বাসের স্থায়ী প্রতিষ্ঠাতাই সে দেশের সরকার। উদ্দেশ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়। এতে তারা শতভাগ সফল। কারণ মৃত্যুভয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো বাড়িতেই সারারাত ধরে ফ্যান চলে না। ফলে বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়।
 
মজার বিষয় হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের এই ‘ফ্যান ডেথ’ বিশ্বাসের পেছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে। যুক্তিগুলো অবশ্য তাদের নিজেদেরই তৈরি। তারা মনে করে যুক্তিগুলো বৈজ্ঞানিক। যেমন : ১. বদ্ধ ঘরে সারারাত ফ্যান চালালে ঘরের অক্সিজেন কমে যায়, ফলে মানুষ মরে যায়;  ২. ফ্যানের বাতাস শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। সারারাত ধরে এই তাপমাত্রা কমতে থাকলে তা মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়; ৩. বৈদ্যুতিক ফ্যানের মোটর এক ধরনের গ্যাস তৈরি করে, যা মানুষের প্রাণনাশী ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু গবেষকদের বক্তব্য একেবারেই উল্টো। ফ্যানের বাতাসে মৃত্যু হয়েছে এমন ‘কেস স্টাডি’ থেকে গবেষকরা তেমন কোনো তথ্যই পাননি যার পক্ষে তারা কথা বলবেন। বরং তারা বলেছেন, ফ্যানের বাতাসে আসলে কোনো মানুষের মৃত্যু হয় না। এ যাবৎ ফ্যানের বাতাসে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো মারাত্মক অসুখ ছিল। বিশেষ করে হৃদরোগীর সংখ্যাই ছিল বেশি। সারারাত ফ্যানের বাতাসের নিচে শুয়ে থাকলে মৃত্যু হয় এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। এটা একটা লোকবিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নয়। তারপরও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ এই বিশ্বাস থেকে সরে দাঁড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় : ১৪১০, জুলাই ০৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।