গত সাত বছর ধরে কলকাতার মুন্সিগঞ্জ ফাইভস্টার কাবের দুর্গা পুজোয় প্রধান পুরোহিতের কাজটি করছেন মুসলিম যুবক শাহিদ আলি। অবাক হলেও বিষয়টি সত্যি।
ফাইভস্টার কাবের পুজোম-পে ষষ্ঠীর দিন গিয়ে দেখা গেল, দেবীর বোধনের জন্য পুজোর উপাচার পঞ্চশস্য না পেয়ে বেজায় চটেছেন শাহিদ। দেবীমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে সদ্য ৩৮ পেরোনো যুবক ধর্মপ্রাণ এই মুসলিম যুবক। হঠাৎই চেঁচিয়ে ওঠে বললেন ‘ খড়গ মায়ের বাম হাতে নয়, ডান হাতে থাকে। ’
এই কাবের মুসলিম সদস্যদের পুজোর আয়োজন না দেখলে অবিশ্বাস্য বলেই মনে হবে। যে নিষ্ঠা নিয়ে শাহিদ রমজান মাসের তিরিশটি রোজা করেন, সেই নিষ্ঠা নিয়েই দুর্গাপুজোর প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান হিন্দু শাস্ত্রমতে পালন করেন।
শাহিদ আলি বাংলানিউজকে বলেন, কাবের সদস্যদের মধ্যে ৯০ ভাগই মুসলিম। সবাই খুব ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে গত ৭১ বছর ধরে পুজো করে আসছেন। এই পুজোটি করতেন যিনি, সেই পুরোহিত বয়সের ভারে সাত বছর আগে পুজো করা বন্ধ করেন। তখন থেকেই আমি এই কাজ শুরু করি। নইলে হয়তো পুজোটা বন্ধ হয়ে যেত।
শাহিদ আরও বলেন, আমি পেশায় ব্যবসায়ী। আমি আমার ধর্ম ইসলামকে যেমন শ্রদ্ধা করি, তেমনি হিন্দু ধর্মকেও শ্রদ্ধা করি। মহালয়ার দিন থেকে আমরা পরিবারের সবাই হিন্দুদের মতো সমস্ত আচার পালন করি। যেদিন থেকে আমি এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছি সেদিন থেকেই অবসর সময়ে পন্ডিত-ব্রাহ্মণদের কছে গিয়ে পুজোর নিয়ম ও শুদ্ধ উচ্চারণে মন্ত্রপাঠ শিখেছি।
পুজোর সঙ্গে যুক্ত শেখ জাহাঙ্গীর, আবদুল রহিম, মুস্তাক কুরেশি, মুহম্মদ আলিদের বক্তব্য, মহালয়ার দিন থেকে শাহিদের বাসায় কোনও আমিষ খাবার রান্না হয় না। পুজোর চারটি দিন উপবাস করে তিনি পুজোর কাজ সমাধা করেন।
মুসলিম যুবকদের পাশাপাশি এই পুজোয় যুক্ত থাকেন মুসলিম নারীরা। পুজোর জোগাড়, শাঁখ বাজানো, উলুধ্বনি থেকে দেবী-বরণ সব নিয়ম এমন নিখুঁতভাবে করেন যে, হঠাৎ দেখলে বোঝা যাবে না যে এটা মুসলিমপাড়ার পুজো, এমনটাই জানালেন প্রতিমাশিল্পী রাম পাল।
ফাইভস্টার কাবের পুজোর আয়োজনে এটা স্পষ্ট, ‘উৎসব আসলে উৎসবই হয়। সেখানে কোনও ভেদাভেদ নেই ধর্মের। ’
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২১২০, অক্টোবর ১৬, ২০১০