ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

৫০০ বছরের পুরনো ঢাকঢোলের হাট

মুনিরুজ্জামান খান চৌধুরী সোহেল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১০
৫০০ বছরের পুরনো ঢাকঢোলের হাট

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এবারও ঢাকঢোলের হাট বসেছে। উপজেলা সদরের পুরাতন বাজারে দুর্গাপূজা উপলে প্রতি বছরের মতো বসেছে ৫০০ বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোলের হাট।



জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় প্রথম তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। পূজা উপলে রাজপ্রাসাদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয় ঢাক, ঢোল, বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য। সে সময় নৌপথে বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলা সড়কের পাশে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে পূজার দুই দিন আগে আসতেন।

পরবর্তী সময়ে পার্শ্ববর্তী মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহা ধুমধামে পূজা শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে বিভিন্ন পূজায় বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অবশেষে স্থান পরিবর্তিত হয়ে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরাতন বাজারের প্রেসকাবের কাছে ঢাকের হাট বসে থাকে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজক এই হাট থেকে পূজার দু একদিন আগে ভাড়ায় বায়না দিয়ে বাদ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যান। ঢাক, ঢোল, কাঁসি-সানাই, ঝনঝনি বিভিন্ন ধরনের বাঁশি কাঁসিসহ হাজার হাজার বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে এখানে। নেচে-গেয়ে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকেন। সাধারণত একটি ঢাক পাঁচ হাজার, ঢোল দুই হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের সুবল দাস, ফরিদপুরের ভাঙ্গার রত্নবালা, মনোহরদির নুরুল ইসলাম ফালু, নেত্রকোনার হরিপদ, ময়মনসিংহের রুমন দাসসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বিক্রেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ হাটে এসে বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করেছেন। এর একটা ঐতিহ্য রয়েছে তাই আমরা এখানে এসেছি।

সম্ভবত বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা বেণী মাধব ঘোষ বলেন, ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এ ঐতিহ্য আমাদের গর্ব। এটিকে ধরে রাখতে স্থায়ী একটি স্থানের প্রয়োজন। তাই তারা সরকারের কাছে ঢাকের হাটের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।


বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৪৫, অক্টোবর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।