বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের ১২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলে ১৬ অক্টোবর শনিবার থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী স্মরণ-উৎসব। সন্ধ্যায় তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
লালনের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক ম. মনিরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খান।
মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ফকির লালন শাহ ছিলেন অসম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব। ফকির লালনকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তিনি সর্বকালীন ও সর্বজনীন। ফকির লালনের গান সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে তার দর্শন তুলে ধরেছিলেন।
প্রধান আলোচক লালন গবেষক ম. মনিরুজ্জামান বলেন, ফকির লালন শাহ এমন এক প্রতিভা, যিনি আমাদের লোকজীবনে জনপ্রিয়। তার গান বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ছাড়া আর অন্য কারোর গান এতগুলো ভাষায় অনুবাদ হয়নি। লালন সম্পর্কে সর্বপ্রথম কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার আলোচনা করেন। তার সম্পাদিত পত্রিকায় তিনি লালনকে তুলে ধরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবাসী পত্রিকায় লালনের ২০টি গান প্রকাশ করেছিলেন। এরপর থেকেই লালনকে নিয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘ছন্দ’ প্রবন্ধে লালনের কয়েকটি গানের পঙক্তি উল্লেখ করে বলেছেন, এই ভাষায় যদি মধুসূদন মেঘনাদবধ রচনা করতেন তাহলে বাঙালির জন্য তা বোঝা অনেক সহজ হতো। ফকির লালন শাহ আমাদের লোকসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি অনেক বড় কবি ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর মাজারের পশ্চিম পাশে কালিগঙ্গার তীর ঘেঁষে বসেছে লালনমেলা । লালন একাডেমি ছাড়াও লালন মাজার শরিফ ও সেবা সদন সংস্থা মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ উৎসবে যোগ দিতে এরই মধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত-অনুসারী কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের মাজারে জড়ো হয়েছেন। স্মরণ-উৎসবের পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে লালনের স্মৃতিচারণা, লালন বন্দনা, লালন সঙ্গীত, লালন মেলাসহ আরো নানা আয়োজন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকশিল্পীদের পাশাপাশি জনপ্রিয় শিল্পীদেরও অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাতভর চলবে গানের আসর। ২০ অক্টোবর বুধবার মধ্যরাতে শেষ হবে উৎসব। উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বাংলালিংক।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২৩১০, অক্টোবর ১৬, ২০১০